কেটে গেছে ৭ বছর। দফা দফায় পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বার বার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। তারপরেও অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। আবারও চলতি মাসের ৯ তারিখ শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। বাকি কাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
ঢাকার সাথে নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ উপজেলার সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের জন্য কীর্তিনাশা নদীর ওপর পুরোনো সেতুটি নির্মাণ হয়েছিল ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে। কিন্তু সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ২০১৫ সাথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তবে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারতো স্থানীয়রা। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগও নেই। গেল ৬ মাস আগে পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই খেয়া পারাপারই ভরসা স্থানীয় কয়েক লাখ মানুষের।
এলাকাবাসী বলেন, ‘এই ব্রিজ নিয়া একটা তামাশা শুরু করছে। মানুষের অনেক ভোগান্তি হইতেছে। এই দিকে কারও নজর নাই। পদ্মা সেতুর আগে এই ব্রিজের কাজ শুরু হইছিল। কিন্তু ২ বছর আগে পদ্মা সেতু হয়ে গেছে আর এটার কোনো খবর নাই।’
সেতুর কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে নড়িয়া উপজেলার অন্তত ১০টি হাট বাজার। ঢাকাসহ বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য আনা নেয়ায় দেখা দিয়েছে জটিলতা। এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে পণ্য পরিবহন করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে লাগছে অতিরিক্ত সময়।
সেতু না থাকায় খেয়া পারাপারই একমাত্র ভরসা স্থানীয়দের। ছবি: এখন টিভি
গোলাম মাওলা সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুফল থেকেও বঞ্চিত নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের মানুষ। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস থেমে যাচ্ছে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে। দুই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে।
বাস চালকরা বলেন, আমরা এই দিকে যাতায়াত করতে পারি না। চলাচলে খুব কষ্ট হয়। আমাদের ভাড়াও কমে গেছে। আগের মতো যাত্রী নাই। যদি ব্রিজটা থাকতো তাহলে আমাদের এই ক্ষতি হইতো না।।
অপরদিকে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তের বসবাসকারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা থেকে। মুমূর্ষ রোগী নিয়ে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। ভোগান্তি কম নয় শিক্ষার্থীদেরও। এদিকে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপাকে কৃষকরা। দফায় দফায় করতে হচ্ছে গাড়ি পরিবর্তন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত তারাও।
সেতু নির্মাণের দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানাতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। ঠিকঠাক মতোই নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানান মের্সাস কহিনূর এন্টারপ্রাইজের সাইট ম্যানেজার খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, 'সেতুর নিচে পাইলিংয়ের জায়গায় আগের একটা ভাঙা ব্রিজ ছিল। তাই এ পাশে পাইল করা যাচ্ছে না। এটা ওঠানোর পর পাইল বসানো হবে।'
পিলার নির্মাণে কিছুটা জটিলতা রয়েছে বলছে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম। তিনি বলেন, 'সাত বছরে প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ এক বছর সময় লাগবে।'
ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুর দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা।