দেশের ভোগ্য পণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের সোনামিয়া মার্কেটে ১ বছর ধরে ব্যবসা করছেন নূর ট্রেডিংয়ের মালিক নাজিম উদ্দিন। কিন্তু ৩ দিন আগে হঠাৎ দোকান বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। তার আগে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর থেকে মসলা পণ্য এলাচের ডেলিভারি অর্ডার স্লিপ দিয়ে টাকা নেন। আবার যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পণ্য কিংবা ডিও কিনেছেন তাদের টাকাও পরিশোধ করেননি। যার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। কোরবানির আগে এমন প্রতারণা করাঙয় বেকায়দায় পড়েছেন প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী। এই ঘটনায় পাওনাদারদের নিয়ে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেন, 'উনি ১০ তারিখে চলে গিয়েছেন, সেখনে আমার টাকা গিয়েছে। সামনের ১৩ তারিখ আবার আমার চেকের ডেট আসছে। এর মধ্যে আমার ৬ কোটি ৪৮ লাখ টকা ওনার হাতে চলে গিয়েছে। শুধু আমার না, বাজারের প্রায় ৬০ জন মানুষের টাকা নিয়েছে এভাবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আলমগীর পারভেজ বলেন, 'প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ জন পওনাদারের চেক পাঞ্চ করেনি। বিষয়টা জানানোর পর সবাইকে ডেকেছি, এর মধ্যে নাজিমকে শনিবার থেকে বাজারে পাচ্ছি না। তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমরা ১১ জন বিশিষ্ট একটা কমিটি করেছি আর এর সঙ্গে থানায় জানিয়েছি সব।'
১৯৮৬ সাল থেকে খাতুনগঞ্জে ডিও ব্যবসার শুরু হয়। যেখানে একটি স্লিপের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনা হয়। যে স্লিপে পণ্যের নাম ও দাম ছাড়া আর কিছুই লেখা থাকে না। অনেকটা বিশ্বাসের উপর প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় খাতুনগঞ্জে। পণ্য ডেলিভারি হওয়ার আগেই আমদানিকারক থেকে মিলার, মিলার থেকে ডিলার। আবার ডিলার থেকে ব্রোকার হয়ে পণ্যের ডিউ শুধু হাত বদল হয়েই থাকে। সবশেষ পাইকারদের হাত ধরে পণ্য যখন খুচরা পর্যায়ে যায় তখন দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী।
এর মধ্য দিয়ে ভোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনিভাবে আস্থার উপর ডেলিভারি অর্ডারের টাকা পরিশোধ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, 'নূর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মাত্র ৬ মাস হলে এ মার্কেটে এসেছে। তার আরএস, পিএস, বিএস কোনোকিছুর ঠিক নেই। আমরা সংগঠন থেকে বারবার বলে দিয়েছি যে এমন ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সংগঠনের কথা না শুনে যারা ব্যবসা করেছে, তারা আজ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
ডিও লেনদেনের জন্য অতীতেও অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যুগ যুগ ধরে বিশ্বাসের ভিত্তিতে পণ্য বেচাকেনার এই রীতিতে বারবার প্রতারণার শিকার হওয়ায় লেনদেনে তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। ব্যবসায়ীরা বলছেন এখন পর্যন্ত ৭০ জন ব্যবসায়ী বাজারে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ না করে গা ঢাকা দিয়েছেন। বাজার থেকে নিয়ে গেছেন ১ হাজার কোটি টাকার উপরে। এমন অবস্থায় অ্যাসোসিয়েশনের শক্ত ভূমিকা এবং সহযোগিতা চান ক্ষতিগ্রস্তরা।