অসুখের শংকা বা আক্রান্ত মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিরাময়ের আলো খুঁজেন। যাদের ওপর এই ভরসা, তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণা ও উচ্চ ডিগ্রি বিদেশ থেকে নিয়ে আসেন।
প্রতিবছর ১২৭টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে বের হওয়া প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর উচ্চ ডিগ্রি নেয়ার স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সেই পথে যাওয়ার সবুজ বাতি যেন নিভে যাচ্ছে। তেমন বার্তাই দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন মেডিকেল কলেজের তাদের স্বীকৃতি মেলেনি। এক যুগ আগে তাগাদা দিলেও সবেমাত্র কাউন্সিল গঠন করেছে বাংলাদেশ। বেঁধে দেয়া সময় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত, এর মধ্যে স্বীকৃতি না পেলে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিদেশে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে ভারত, পাকিস্তান, চিন, নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশ সকল শর্ত পূরণ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় হতাশ মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘আসলে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। এতো অর্থ ব্যয় করে পড়াশোনার কী লাভ হলো? এসব ভাবলে আমাদের পড়াশোনার মোটিভেশন হারিয়ে যায়।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামশাদ জাহান সুমু বলেন, ‘একজন টিচার হিসেবে আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এটি। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি তখন বিশ্বের দুয়ার উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
প্রতিবছর প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের ৩ হাজার শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হলেও এ বছরই প্রথম ১৪শ’তে নেমেছে। যেখান থেকে বাংলাদেশের আয় হতো অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সচিব অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. জামাল বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসা যেমন কমে যাচ্ছে তেমন একইভাবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপকহারে বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হতে না পারলে দেশের শিক্ষার্থীরাও বিদেশমুখী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, অ্যাক্রিডিটেশন না পেলে চলতি বছরের জুনের পর থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিদেশ থেকে কোন ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন না। এমনকি বিদেশে চাকরি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ হারাবেন এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকরা, এমনটিই জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. জামাল।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ করে অনেক বেশি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ তৈরি ফেলেছি। সেখানকার মান নিয়েও সন্দেহ আছে। আবার সরকারি অনেক মেডিকেল আছে যার হয়তো অনুমোদন আছে কিন্তু বিল্ডিং নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপোষে যেনতেনভাবে মেডিকেল কলেজ খোলার মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘মেডিকেল শিক্ষার ভেতরে যে মান সংরক্ষণের বিষয় আছে সেটাও খুব ঢিলেঢালা। তাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে গাইডলাইন অনুযায়ী একটি ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে।’
শেষ সময়ে এসে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অ্যাক্রিডিটেশন কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘তাদের একটি অফিস ছিল না সেটির ব্যবস্থা করেছি। আমরা একসঙ্গে সব করতে পারবো না। আমরা ভাগ ভাগ করে যদি করি তাহলে হয়তো আমরা সাকসেসফুল হবো।’
কলেজ ক্যাম্পাস, ছাত্রাবাস, ফ্যাকাল্টি, প্রশিক্ষণ, গবেষণাসহ প্রায় ১১টি শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোকে অ্যাক্রিডিটেশন নিতে হবে। তবে কোন কলেজগুলোকে অ্যাক্রিডিটেশনের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্তই এখনও নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের কাউন্সিলের যাচাই-বাছাইয়ের পর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের ইন্সপেকশনে উতরে গেলেই মেডিকেল কলেজগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাবে।