দেশে এখন

পানি স্বল্পতায় ডিম ছাড়তে পারছে না মাছ

কোথাও নেই গভীরতা, কোথাও আবার নিয়ম না মেনে চলছে মাছ শিকার। কোনটি আবার ভরে গেছে কুচুরি পানায়, এমনই অবস্থা নাটোরের বিভিন্ন মৎস্য অভয়াশ্রমের। প্রধান নদীগুলোর পানি কমে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে মা মাছ।

দেশিয় মাছের বংশ বিস্তারে নদীর নির্দিষ্ট জায়গায় কচুরি পানা ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে রেখে তৈরি করা হয় মাছের জন্য নিরাপদ অভয়াশ্রম। শুষ্ক মৌসুমে ৩ থেকে ৪ মাস সেখানে অবস্থান করে মা' মাছ। আর বর্ষায় নতুন পানিতে ডিম ছাড়ায় নদী, খালে-বিলে ছড়িয়ে পড়ে দেশিয় প্রজাতির নানা জাতের মাছ।

নদীর স্বল্পপানিতে চিতল মাছের লাফালাফি জানান দেয় এখনও হারিয়ে যায়নি স্বাদু পানির এই মাছ। বিভিন্ন মা মাছের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে নলডাঙ্গা উপজেলার বারনাই নদীর নাথুরঘাটের অভয়াশ্রমে। শুষ্ক মৌসুমে যখন চারিদিকে পানি কমতে থাকে, তখন মা মাছগুলো আশ্রয় নেয় এসব অভায়াশ্রমে।

তবে টানা তাপপ্রবাহের কারণে নদীর পানি কমে আসায় হুমকির মুখে পড়েছে এ জায়গার মাছ। গভীরতা না থাকায় ডিম ছাড়তে পারছে না মা মাছগুলো। গতবছর পানি কমার কারণে অভয়াশ্রমের মাছ মারা যাওয়ায় এবারও শঙ্কায় জেলেরা।

তারা বলেন, নদীতে পানি নাই। পানি না থাকা অনেক ঝুঁকি। যেভাবে পানি কমতেছে এতে অনেক মাছ মারা যাইতে পারে। এবার খরা বেশি তাই পানি কমে গেছে। খনন করলে অনেক মাছ থাকবে।

প্রতিবছর নাটোর জেলায় মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৮০ হাজার টন। এরমধ্যে চলনবিলসহ বিভিন্ন নদ-নদী থেকে যোগান আসে প্রায় ২০ হাজার টন। আর স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বড় আধার সৃষ্টি করে এসব অভয়াশ্রম।

তবে জেলার বেশিরভাগ অভয়াশ্রম অরক্ষিত থাকায়, নিষিদ্ধ জেনেও মাছ শিকার করছেন অনেকে। কোনটি আবার ভরে গেছে কচুরিপানায়। রাতের আধারেও শিকার করা হচ্ছে মা মাছ। এতে করে আগামী বর্ষায় দেশি মাছের উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

নাটোর জেলায় এক সময় স্বাদু পানি মাছের বংশবিস্তারে মোট অভয়াশ্রম ছিল ৪০টি। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে নষ্ট হয়েছে অর্ধেকরও বেশি। বর্তমানে ১৯টি অভয়াশ্রম থাকলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে খুবই স্বল্প বরাদ্দ। চলতি অর্থবছরে ৪টি অভয়াশ্রম সংস্কারে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা করে। আরও বরাদ্দ পেলে খননসহ তা রক্ষার আশ্বাস মৎস্য বিভাগের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'নতুন করে অভয়াশ্রম খনন করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া আছে। বিষয়টা এখনো পরিকল্পনাধীন রয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমরা বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার উদ্যোগ নেব।'

নদী পারের মানুষরা বলছে, বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে নদীর পানি সবচেয়ে কমে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়ে অভায়াশ্রমের মাছ। এসব মাছ রক্ষার পাশাপাশি খনন করা হলে ঘটবে দেশিয় মাছের বিস্তার। সে সাথে ফিরবে বিলুপ্ত প্রায় নানা প্রজাতির মাছ।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর