দেশে এখন
0

যাত্রাবাড়ী-কাচঁপুর সেতু সড়কে ছিনতাই আতঙ্ক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে কাচঁপুর সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে প্রতিদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের তদারকির পরও সড়কে চলাচলকারীরা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। সড়কটিতে নানান উন্নয়ন কার্যক্রম হলেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৬ সালের আগস্টে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে কাচঁপুর সেতু পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশের ৪ লেন থেকে ৮ লেনে উন্নীত করা হয়। সেই সঙ্গে ইউটার্ন ,ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজে সড়কের যানজট অনেকটাই কমে গেছে। তবে এই সড়ক ব্যবহারকারীরা হরহামেশা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন।

দিন কিংবা রাত সার্বক্ষণিক ক্যামেরায় নজরদারি, দায়িত্বে স্থানীয় ও হাইওয়ে পুলিশ। তারপরও এই নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে কাচঁপুর সেতু পর্যন্ত অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

ঘটক দেলোয়ার হোসেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাজধানীতে জীবনসঙ্গী খুঁজে দেয়ার কাজ করছেন। শনিরআখড়া এলাকার অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারিদের কবলে পড়ে সব হারিয়েছেন। ঘটনার পরদিন নিকটস্থ থানায় গিয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ না করে মোবাইল হারানোর বিবরণ দিয়ে সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আপনার মালামাল ও মোবাইল হারিয়ে গিয়েছি এই বিষয়ে ডায়েরি করতে পারবেন। তাই বাধ্য হয়ে সাধারণ ডায়েরি করে আসছি।”

দেলোয়ারের ছিনতাইয়ের ঘটনায় কেনো সাধারণ ডায়েরি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি বলেন, ‘যদি ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়ক দেখভাল করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের ওয়ারী বিভাগ আর সাইনবোর্ড থেকে কাচঁপুর সেতু পর্যন্ত অংশের দায়িত্বে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তবে সড়কে অপরাধ দমনে বা সংগঠিত হলে কাজ করে স্থানীয় থানা পুলিশ।

যাত্রাবাড়ী চত্বর, কাজলা, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল ইউটার্ন, সাইনবোর্ড, মৌচাক ইউটার্ন ও কাচঁপুর সেতুর নিচের অংশে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। দিনের চেয়ে রাতের আঁধারেই এই সড়ক ব্যবহারকারীরা বেশি ছিনতাইয়ের শিকার হন। দেশীয় অস্ত্র ঠেকানোর পাশাপাশি কখনও নম্বর প্লেট ছাড়া মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকার ব্যবহার করে ছিনতাই করা হচ্ছে। জড়িতদের মধ্যে বেশিরভাগই কিশোর বা যুবক বয়সী।

স্থানীয়রা বলেন, রাতে চলাফেরা করতে ভয় লাগে। এই এলাকায় চলন্ত গাড়ি থেকে মোবাইল ছিনতাই হয়ে যায়। সবমিলিয়ে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা আছে।

রাজধানীতে বিতর্ক প্রতিযোগিতার এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকার দিকে আমরা বেশি কিশোর অপরাধী দেখে থাকি। এসব এলাকায় কিশোর অপরাধ দমনসহ চুরি-ছিনতাই রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না হলে আইনের প্রতি আস্থা হারাবেন ভুক্তভোগীরা।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে দিন ও রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিও প্রয়োজন।’