দেশে এখন
0

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ ঢাকায়

ভূমধ্যসাগরে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ লিবিয়া থেকে আজ (বৃহস্পতিবার, ২ মে) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে এসভি-৮০৮ বিমানযোগে দেশে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি অভিবাসী দল নৌকায় করে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে গেলে মধ্যরাত সাড়ে ৪টার দিকে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ৫৩ জনের মধ্যে ৫২ জন যাত্রী ও একজন চালক ছিলেন।

দুর্ঘটনায় ৪৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি, পাকিস্তানের ৮ জন, সিরিয়ার ৫ জন, মিসরের ৩ ও নৌকা চালক রয়েছেন।

ওই ঘটনায় নৌকায় থাকা ৯ জন যাত্রী যান, এর ৮ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। আর অপর ব্যক্তি পাকিস্তানের নাগরিক।

নিহত বাংলাদেশিরা হলেন মামুন শেখ, সজল বৈরাগী, নয়ন বিশ্বাস, রিফাত শেখ, সজীব কাজী, ইমরুল কায়েস আপন, মো. কায়সার ও রাসেল শেখ। সবার বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়।

এর মধ্যে সজল, নয়ন বিশ্বাস, মামুন সেখ, কাজী সজীব ও কায়সারের বাড়ি রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। আর বাকি তিনজন রিফাত, রাসেল ও ইমরুল কায়েস আপনের বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া, ফতেহপট্রি ও গয়লাকান্দি গ্রামে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্লাটফর্ম) শরিফুল হাসান জানান, ওই নৌকায় থাকা আরও ১১ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে। তাদের মধ্যে মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার দুজন ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের অভিযোগ, নিহত ৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়ে যেহেতু মামলা হয়েছে, আশা করছি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বিস্তারিত উঠে আসবে।

এদিকে পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেন নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী। মামলার দুই আসামিকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘবদ্ধভাবে খুনের ৩০২/৩৪ ধারা এবং মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে গত ১৯ এপ্রিল মামলা দায়ের করার দুইদিন পরই তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যেতে চেয়েছিলেন। সজলের পূর্ব পরিচিত যুবরাজ কাজী (২৪) এবং লিবিয়ায় অবস্থানরত মোশারফ কাজী ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে বৈধপথে ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। সজল বৈরাগী ও তার পরিবার ওই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।

দু’পক্ষের সম্মতিতে গত বছর ১৭ নভেম্বর যুবরাজ কাজীর গোপালগঞ্জের বাসায় আড়াই লাখ টাকা এবং পাসপোর্ট দেন সজল। ৩০ ডিসেম্বর তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেয়া হয়। বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে গাড়ি থেকে নামার আগেই সজলের কাছ থেকে আরও নগদ পাঁচ লাখ টাকা নেন যুবরাজ কাজী। এর পর গত ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের বাসায় গিয়ে যুবরাজ কাজীর হাতে আরও সাড়ে ছয় লাখ টাকা দেন সুনীল বৈরাগী। কিন্তু এর পর থেকে ছেলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তার।

পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পারেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে আট বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সজলও রয়েছেন।

সুনীল বৈরাগী অভিযোগ করে জানান, ২০ জনের একটা চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে নিহতদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেন। তারা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও উত্তাল সাগরে ছোট নৌকায় তুলে দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন।

আসু