বাংলা নতুন বছরের প্রথমদিন থেকেই চালের বস্তার গায়ে জাত, দাম , উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকার কথা থাকলেও বৈশাখের ২য় দিন বাজার ঘুরে দেখা যায় আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে চাল।
আজ (সোমবার, ১৫ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার খুচরা বাজার এবং আড়তে পরিপত্র অনুযায়ী চালের বস্তার গায়ে এমন কোনো লেখা চোখে পড়েনি।
বিক্রেতারা বলছেন, চালের দাম লেখা থাকলে খুচরা বিক্রেতাদের হয়রানি কমবে। তারা বলেন, চালের গায়ে দাম ও নাম লেখা থাকলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। কেউ বলতে পারবে না যে আপনারা বেশি লাভ করছেন। আমাদেরও আর কৈফিয়ত দিতে হবে না।
সহকারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহা. মনিরুল হক বলেন, 'অটো মিল পর্যায়ে পরিপত্র কার্যক্রম বাস্তবায়ন গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে হয়তো ওই বস্তার চাল এখনো আসে নাই। পুরনো আমন ধানের চাল এখনো দোকানগুলোতে আছে। নতুন চাল আসলে পরিপত্র বাস্তবায়ন হবে।'
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র বাস্তবায়নে জেলায় জেলায় চালকল মালিকদের সাথে এরই মধ্যে সভা করেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও খাদ্যবিভাগ।
চালের বড় উৎপাদনকারী এবং যোগানদাতা জেলা দিনাজপুর। এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন মোকামে চাল সরবরাহ হয়।
দিনাজপুরের ২০০ অটো রাইস মিলের মধ্যে বেশিরভাগ এখনও উৎপাদনে যায়নি। তাই সরকারের যে নির্দেশনা, তা বাস্তবায়ন নেই। চালের বস্তায় কিছু নির্দিষ্ট তথ্য লেখার যে পরিপত্র জারি করেছিল সরকার সেগুলো মানছে কেবল দুই একটি মিল।
রেশমা অটো রাইস মিলের সুপারভাইজার মো. রফিক ইসলাম বলেন, 'আমরা মোটামুটি তিন মাস আগে থেকে শুরু করেছি। চালের নাম ও দাম বস্তার গায়ে দেয়া আছে। আমরা এটার বাস্তবায়ন করছি।'
দিনাজপুরে ছাপানোর মেশিন না থাকায় বাইরে থেকে ছাপিয়ে আনছেন বস্তাগুলো। মালিকরা বলছেন দ্রুতই চলে আসবে মেশিন। তবে বেশিরভাগ চালকল মালিক অপেক্ষা করছেন নতুন বোরো ধানের।
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, 'ধানের জাত এবং উৎপাদনের তারিখ নিয়ে সন্দেহ থাকায় কিছুটা সময় লাগছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে সব চালকল নির্দেশনাযুক্ত বস্তা ছাপানো শুরু করবে।'
এদিকে পরিপত্র অনুযায়ী ধানের জাত, দাম লেখা নেই কুমিল্লার আড়তের চালের বস্তায়। নতুন মোড়কে চাল আসতে সময় লাগতে পারে আরও দুই সপ্তাহ। মজুত করে সুযোগে দাম বাড়িয়ে, নতুন মোড়কে বাজারজাত করার ছলচাতুরী রোধেও থাকতে হবে সরকারের নজরদারি বলছেন বিক্রেতারা।
অচিরেই নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত তথ্য ছাপানো চালের বস্তায় চাল সরবরাহ হবে বলে জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী। তিনি বলেন, 'মিল মালিকগণ কীভাবে বস্তায় গায়ে চালের মূল্য ও উৎপাদনের তারিখটা লিখতে পারেন, এ বিষয়ে হ্যান্ড প্রিন্টার দিয়ে ভিডিও তৈরি করে তাদের কাছে পাঠিয়েছি। তারা আমাদেরকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।'
একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়লে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা দুষেন একে অপরকে। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলেন, বাজারে বিভিন্ন ধরনের চাল আছে। সবগুলোর দাম সমান নয়। চালের দাম যদি কমানো যায় তাহলে জনগণ স্বস্তি পাবে। সরকারের এ পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।
ধানের জাত একই। অথচ তা থেকে উৎপাদিত চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে। যেমন স্পেশাল মিনিকেট, সুপার মিনিকেট ইত্যাদি। চলে ভোক্তার সাথে নানান কারসাজি।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চালের বস্তার গায়ে ধানের জাত, মিলগেটের মূল্য, উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানের নাম লিখার নির্দেশনা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা গেল চালের আড়ত, খুচরা ও পাইকারি বাজারে কোথাও তা কার্যকর হচ্ছে না।
অনেক ব্যবসায়ী নতুন এই নির্দেশনা জানেনই না। তারা বলেন, আমরা পরিপূর্ণভাবে তেমন কিছু জানি না। শুধু জানি বস্তায় মূল্য দেয়া হবে। সরকার চেষ্টা করছে কিন্তু বাস্তবায়ন করাটা এ দেশে মূল বিষয়।
এদিকে সচিবালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান ৭দিন পর পরিস্থিতি জানানো হবে। তিনি বলেন, 'বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে রমজান মাসে আপনারা আমাদের যেভাবে মার্কেটে দেখেছেন। সেভাবে সারাবছরেই আমাদেরকে পাবেন। আগামী ৭ দিন পর আমি আপনাদেরকে জানাতে পারবো।'