দেশে এখন

ঈদে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার গাড়ি যাচ্ছে সারাদেশে

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেট্রোর বেসরকারি বাস যাত্রী নিয়ে যেমন যায় রাজধানীর বাইরে, তেমনি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসিও পাঠায় দূরের পথে। কিন্তু এসব বাসের দূরপাল্লায় যাওয়ার মতো নেই পর্যাপ্ত ফিটনেস, চালকদেরও ধারণা নেই দূরের সড়ক সম্পর্কে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই যাতায়াত করে সরকারি-বেসরকারি এসব পরিবহন।

বলাকা পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. জাহাঙ্গীর। বাসটির রুট পারমিট সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরেই ঈদে এই গাড়িটি নিয়েই তিনি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গিয়েছেন যাত্রী নিয়ে। এবারও আশা করছেন ঈদে তিনি ঢাকার বাইরে যাবেন। কিন্তু কীভাবে?

জাহাঙ্গীর বলেন, 'এর আগে ঈদের ভিতর অনেক জায়গায় গেছি। শেরপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, গাইবান্ধা। একদিনের জন্য মালিকরে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। আর আমরা চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাই।'

ছোট এ বাসটি নিয়েই লং রুটে যাবেন ড্রাইভার জাহাঙ্গীর। ছবি: এখন টিভি

জাহাঙ্গীরের মতো অসংখ্য বেসরকারি পরিবহন ঈদে ঢাকার বাইরে চলে যায়। যাদের বেশিরভাগেরই নেই রুট পারমিট কিংবা দূরপাল্লায় চলার মতো ফিটনেস। শঙ্কার বিষয়, দূরের সড়ক সম্পর্কে ধারণাও নেই এসব চালকের। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।

একজন ড্রাইভার বলেন, 'গত ঈদে সাত দিনের জন্য রিজার্ভে গিয়েছিলাম। সাত দিনে এক লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। পুলিশ ধরলে তো মামলা দেয়ার ভয় থাকে। তারপরও যাই।'

বেসরকারি পরিবহনের মতো একই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিরও। তারাও নগর রুটে চলা বাস পাঠাবে দূরপাল্লার ঈদযাত্রায়। রাজধানীর মতিঝিল, কল্যাণপুর, গাবতলী, জোয়ারসাহারা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গাজীপুর, যাত্রাবাড়ী ডিপো থেকে এসব বাসের টিকিট কাটা যাচ্ছে।

প্রায় সাড়ে ৫০০ গাড়ি এতদিন ঢাকা মেট্রোর মধ্যে চললেও এখন সেসব গাড়ি যাবে ঢাকার বাইরে। যার বেশিরভাগ গাড়ির নেই ফিটনেস কিংবা দূরযাত্রায় চলাচলের সামর্থ্য। আবার রাজধানীর বাইরের সড়ক সম্পর্কেও তেমন ধারণা নেই এই বাসচালকদের। তাই অচেনা সড়কে ঝুঁকি আছে জেনেও বিআরটিসি’র নির্দেশনার কারণে দূরপাল্লায় বাস চালাতে বাধ্য হন চালকরা।

ঢাকা শহরে চলা বিআরটিসির এসব বাসই ঈদে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে। ছবি: এখন টিভি

বিআরটিসির একজন চালক বলেন, 'অনুমতি নাই। কিন্তু ঈদে যাওয়ার চাহিদা থাকে একটু আমাদের। ভালো কিছু টাকা পাওয়া যায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললে আমাদের যেতে হবে। আমরা প্রতিবছরই যাই।'

তবে দায় এড়ালেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম। তার যুক্তি চালকরা যেন সব সড়কে অভিজ্ঞ হতে পারেন সেজন্যই দূরযাত্রায় পাঠানো হয় ঢাকার চালকদের। এতে খুব বেশি ঝুঁকি দেখছেন না তিনি।

তাজুল ইসলাম বলেন, 'একজন ড্রাইভারকে সর্বমুখী পারদর্শী করতে চেষ্টা করেছি। একজন ড্রাইভার আগে ঢাকা শহরে চালাতো। কেউ এসি গাড়ি চালাতো, কেউ নন এসি। এই জিনিসটা আমি ভেঙ্গে দিয়েছি। এই মাসে যে লং রুটে চালাচ্ছে, পরের মাসে সে শর্ট রুটে চালাবে। ফিটনেস ছাড়া লং রুট কেন শর্ট রুটেও গাড়ি চলাচল করার কথা না।'

এখন টিভির সাথে কথা বলছেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম। ছবি: এখন টিভি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) বলছে, গত তিন বছরে প্রায় শতাধিক বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার বেশিরভাগই ঘটেছে অদক্ষ কিংবা নতুন চালকের কারণে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বাসের বেশিরভাগেরই দূরপাল্লায় চলাচলের সক্ষমতা নেই। ঈদযাত্রায় সেবা দেয়ার জন্য যত চালক প্রয়োজন তা তৈরি করতে পারেনি বিআরটিসি। তাই ঈদে ঢাকা মেট্রোর চালক দিয়ে দূরপাল্লায় যাতায়াতে ঝুঁকি দেখছেন যোগাযোগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ হাদিউজ্জামান।

তিনি বলেন, 'যানজট এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিপ্রবণ অনেকগুলো স্পট ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। দূরের রাস্তায় চালানোর জন্য দীর্ঘসময় স্টিয়ারিংয়ে বসে থাকতে হয়। এর জন্য অভিজ্ঞতা লাগে। যারা শহরের মধ্যে গণপরিবহন চালাচ্ছে সে অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে থাকে না।'

যোগাযোগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ হাদিউজ্জামান বলছিলেন ছোট রুটের গাড়ি বড় রুটে চালানোর ঝুঁকি। ছবি এখন টিভি

হাদিউজ্জামান আরও বলেন, 'এখানে বিআরটিসির একটা ম্যান্ডেটরি ফাংশন চালক তৈরি করা। বিআরটিসির বহরে আরও আধুনিক গণপরিবহন যুক্ত করা উচিত।'

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ গ্রামের উদ্দেশ্যে যায়। যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাসের মাধ্যমে গ্রামে যায়। যদিও বিআরটিসির সক্ষমতা আছে সাত থেকে আট ভাগ। কিন্তু বিআরটিসির পরিবহনগুলোর ফিটনেস এবং চালকদের সেই দূরের পথ চেনা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর