পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন

রেহাই পেল সিআরবি'র শতবর্ষী গাছ

অবশেষে প্রতিবাদের মুখে রেহাই পেল শতবর্ষী গাছ। সিআরবি'র গাছ রক্ষা করেই র‍্যাম্পের বিকল্প নকশার সিদ্ধান্ত নিলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর আগে শতায়ু গাছ নিধন করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণের প্রতিবাদে সরব হন সচেতন নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবিদরা।

চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বিতল সড়ক। ছবি: এখন টিভি

পাহাড়ের খাঁজ কেটে করা ওপরে নিচে দুটি সড়ক। টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেট। চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বিতল সড়ক। একপাশে পাহাড় আর দুই সড়কের মাঝখানে সারি সারি নানা প্রজাতির গাছ। যার কোনো কোনোটি শতবর্ষী। শতায়ু এই বৃক্ষশোভা সড়কটিকে করে তুলেছে অনন্য, দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। পথ চলতে চলতে শীতল হাওয়ার পরশ পান যাত্রীরা। এসব গাছপালায় অসংখ্য পাখি আর পোকামাকড়ের আবাস।

গাছগুলোতে এরইমধ্যে রঙ দিয়ে দেয়া হয়েছে নম্বর। কারণ নগরীর একমাত্র এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য নিউমার্কেটগামী সড়কের র‍্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় এই গাছগুলো কেটে। মঙ্গলবার ( ২এপ্রিল) দুপুরে সড়ক পরিদর্শনে আসেন নগরবিদ ও এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক।

তারা বলছেন নিউমার্কেট, ফিরিঙ্গিবাজার, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনসহ কর্মচঞ্চল এই এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর যাতায়াত সহজ করতে এই স্থানে র‍্যাম্প গুরুত্বপূর্ণ।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজ বলেন, 'এখন যেহেতু অভিযোগ উঠেছে গাছ না কেটে কিভাবে র‌্যাম্পটা করা যায় সেটা আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবো এবং আমরা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।'

প্রকৃতির এই প্রাণসঞ্চারীদের সহায় হয়ে মাঠে নামেন চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবিদরা। তাতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষও। সিআরবির এই অংশে গাছ কেটে র‍্যাম্প নির্মাণ বন্ধে মঙ্গলবারও কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। প্রাণপ্রকৃতি বিনষ্ট হয়- এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ফের দাবি জানান তারা।

সচেতন নাগরিকরা বলেন, 'আমরা বলেছিলাম যে এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে এসে দেওয়ানহাটে শেষ হবে এবং পরবর্তীতে লালখান বাজার থেকে শুরু হয়। তাহলে মাঝখানের যে রাস্তা রয়েছে সেটার জন্য র‌্যাম্পের প্রয়োজন হতো না। আর শতবর্ষী গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল না।'

পরেও নগরবিদরাও এই সড়কটিতে গাছ কাটার বিপক্ষে মতামত দেন। প্রয়োজনে বিকল্প ডিজাইনে র‍্যাম্প নির্মাণের পরামর্শ দেন তারা। অবশেষে মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠকে বসে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে গাছ রক্ষা করে র‍্যাম্পের বিকল্প নকশার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিডিএ'র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, 'গাছ না কেটে দরকার পরলে র‌্যাম্প ছোট করে দেওয়া হবে।'

নগরবিদ আশিক ইমরান বলেন, 'মাঝখানে পিলার রেখে দুইপাশে র‌্যাম্পের ডিজাইন করেছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি পিলার থাকুক র‌্যাম্পকে এল করে রাস্তার উপরে নিয়ে  আসা। তাহলে এখন যে গাছগুলো কাটতে হতো র‌্যাম্প যদি পুরোটা রাস্তার উপরে থাকে তাহলে  আর গাছ কাটতে হবে না।'

গবেষণার তথ্য বলছে, সিআরবি এলাকায় মোট ২২৩টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। যার মধ্যে ঔষধি উদ্ভিদ আছে ১৮৩ প্রজাতির। আর সিআরবির একপাশ দিয়ে ঈদের পরই র‍্যাম্প নির্মাণ শুরুর কথা রয়েছে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর