খনার বচনে বলে, পৌষে কুশি মাঘে বোল, ফাল্গুনে গুটি। তবে, এবার রাজশাহীর প্রায় বিশ হাজার হেক্টর আম বাগানে সে বচনে ছেদ পড়েছে। পৌষ-মাঘ পেরিয়ে কথা রাখেনি ফাল্গুনও। কৃষি পঞ্জিকায় তিনমাস পেরুলেও বাগানের সবটাজুড়ে মুকুল আসেনি।
ফল গবেষকরা বলছেন, রাতে ১০ থেকে ১৫ এবং দিনে ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফোটে আমের মুকুল। তবে, এবারে শীত বেশি থাকায় কমেছে মুকুলের আধিক্য।
রাজশাহী ফল গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফল গবেষক ডা. মো. আলীম উদ্দিন বলেন, 'সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মুকুল বের হয়ে যায়। অনেক গাছ আছে যেখানে মুকুল পুরোটায় এসেছে।'
জেলার আম বাগান অধ্যুষিত এলাকা বানেশ্বর, বাঘা, চারঘাট, আড়ানী, বরেন্দ্রসহ নয় উপজেলায় বাগানগুলোয় জাতভেদে মুকুল এসেছে ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশ গাছে। বাগানি ও ফল গবেষকরা বলছেন, এ বছর পুরনো ও জনপ্রিয় জাতগুলো পিছিয়ে আছে মুকুলে।
রাজশাহীতে আম উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা। ছবি: এখন টিভি
আম বাগানের মালিকরা জানান, 'এই মৌসুমে যেই সময়টায় মুকুল আসে গাছে সেই সময় মুকুল আসেনি গাছে। '
আরেকজন বলেন, 'গতবার মুকুল বেশি এসেছিল এবার একটু কম আসবে। যাতে ১০টা ডাল থাকলে ৫টায় আসছে ৫ টায় নেই।'
রাজশাহীর ফল গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এক বছর বাম্পার ফলন হলে তার পরের বছর মুকুল আসতে বিলম্ব হয়। কারণ গাছ প্রস্তুত হতে একটু সময় লাগে। সেই হিসেবে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মুকুল এসেছে ৫০-৬০% আর হয়তো সামনে কিছু আসতে পারে।'
এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন কমলে এবার আমের দামে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কোনো মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হলে তখন ব্যবসা ভালো হয়।
এমন অবস্থায় বাগানে সেচ ও কীটনাশক দেয়াসহ বাড়তি যত্নের কথা বলছেন ফল গবেষকরা।
বাগানে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এই সময়ে মুকুলে ওষুধ দিচ্ছেন তারা, যাতে পচন না ধরে।
ডা. মো: শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, 'কৃষকের কাছে পরামর্শ আমাদের যে গাছ গুলোতে মুকুল চলে এসেছে এবং ফুল ফুটে নাই সেই গাছগুলোতে স্প্রে করা। যেন গাছের কোনো অংশ বাদ না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।'
গেল বছর রাজশাহীতে সাড়ে ১৯ হাজার হেক্টর আমের বাগানে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। এবছরও অন্তত ২ লাখ ৬০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। যার আনুমানিক বাজারদর অন্তত ১৮ কোটি টাকা। গেলবারের চেয়ে যা অন্তত ৩ কোটি টাকা বেশি।
রাজশাহীর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, 'আমরা আশাবাদী আমাদের বাজার গতবারের থেকে বেশি হবে। গতবছর ১৫শ’ কোটি টাকা ছিল এবার ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ কোটি হবে।'
আঞ্চলিক অর্থনীতিতে ২ হাজার কোটি টাকা যোগান দেয় পান আর আম থেকে আসে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকার বেশি।