কত পরিবারকে নিঃস্ব, কত স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল আগুনে!

0

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দলে দলে ভিড় করছেন স্বজনরা। সবাই খুঁজছেন, কেউ কেউ দৌড়ে হাসপাতাল করিডোরে প্রিয় মানুষটাকে একবার দেখার জন্য হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।

সারি সারি রাখা মরদেহ, চারপাশে কেবল স্বজনদের আহাজারি। ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। কে জানত বেইলি রোডে এই যাওয়াই হবে শেষ গন্তব্য!

দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েট থেকে দুই বন্ধু সন্ধ্যায় বেইলি রোডের 'কাচ্চি ভাই' রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মরদেহ হয়ে শুয়ে আছে বার্ন ইউনিটের হিমঘরে। এতবড় ক্ষতি কীভাবে মেনে নেবে সন্তান হারানো দুই পরিবার!

বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বুয়েট শিক্ষার্থী ও বরিশাল জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত

রহমান হিমেল নামের এক ব্যক্তি তার বোন ও তার দুই বাচ্চাকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তার মতো অনেকেই স্বজন হারিয়ে মেডিকেলে আহাজারি করছেন।

বেইলি রোডের ভয়ংকর আগুনে প্রাণ যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। সর্বশেষ খবর, এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত কিংবা ক্ষতিগ্রস্তদের হিসাব শেষ হয়নি। মারা যাওয়াদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও বেশ কয়েকজন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দলে দলে ভিড় করছেন স্বজনরা। সবাই কেবল খুঁজছেন, কেউ কেউ দৌড়ে হাসপাতাল করিডোরে একবার প্রিয় মানুষটাকে দেখার জন্য হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন, ওই ভবনে ছিল একটি সিঁড়ি, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

রাত ভারি হচ্ছে আর আহাজারি বাড়ছে। কয়েক ঘণ্টা বাদে ভোর হবে, আলো ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু যে মানুষগুলো চলে গেল, তাদের পরিবার-পরিজনের জীবনে আর কখনও কি আলো ফুটবে!

আহারে, আগুনের কাছে এত ঠুনকো জীবন! ঢাকা শহরে  এমন আগুনের ঘটনা প্রথম নয়, একেকবার একেক জায়গায় ঘটে, অসংখ্য প্রাণ যায় আর তা সাময়িক প্রতিশ্রুতি-ব্যবস্থার গল্প শুনিয়ে ফুরিয়ে যায়। সপ্তাহ না পেরোতেই আবার যা তাই হয়ে দাঁড়ায়।

ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনার নেপথ্যের কারণ, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ হতাহত বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আহত ও দগ্ধদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। সরকার আগুনে দগ্ধ সবার ব্যয়ভার বহন করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানির এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করবে রাষ্ট্র, সিস্টেম নামের যন্ত্র কীভাবে ঠিক হবে!

আসু