দেশে এখন
0

ভাসমান মানুষদের পুনর্বাসনের দাবি

কী গ্রীষ্ম, কী শীত! জীবনের বাঁকে বাঁকে বঞ্চনার শিকার হয়ে পথেঘাটে যাদের বসবাস, দুর্ভোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। সংকটে থাকা এই জীবনগুলোকে স্বস্তি দিতে তাই পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে।

মুখে খাবার তুলতে যত সমস্যা, এর সংস্থান করতেও এমনই কষ্টের অন্ত নেই পরিবারের কর্তার। সংগ্রাম ভরা জীবনে চেষ্টার অন্ত নেই। পরিবারের সাধ-আহ্লাদ পূরনে হাড়ির চাল ও মাথার ওপর চালা একসাথে জোটাতে গিয়ে হার মানতে হয় একটিতে। আশ্রয়হীন জীবনের জন্য সমাজ থেকে জোটে ছিন্নমূলের বিশেষণ।

ঘরবাড়ি ঠিকানা নেই। তাইতো অস্থায়ী কোন ছাউনির নিচে মাথা গুঁজে রাত কাটে পরিবারগুলোর। গ্রীষ্মের দাবদাহ বা শীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার শৈত্যপ্রবাহের মতো ছয় ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন কষ্ট-যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় ভাসমান মানুষগুলোকে।

বিশেষ করে শীতকালজুড়ে সবচেয়ে তেঁতো হয়ে ওঠে হাজেরা, কমলাদের জীবনের স্বাদ। এদের জীবনের গল্পগুলো প্রায় একইরকম। কারও হাত ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে স্বামী, কারও স্বামী পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। সন্তান বা পরিবার-পরিজন থাকলেও কেউ খোঁজ নেয় না। নিরুপায় হয়ে লাজ-লজ্জা ত্যাগ করে মানুষের কাছে হাত পেতে জীবন চালানো মানুষগুলোর রাত কাটে রেলস্টেশন, সড়ক বিভাজক বা পরিত্যক্ত কোন জায়গায়।

ভাসমান এক নারী বলেন, 'আমার বাড়িঘর নাই, মানুষের কাছে হাত পাইতা খাই। আমার স্বামী ক্যান্সারে মারা গেছে। পোলা-মাইয়া আছে কিন্তু তারা দেখে না।'

সারাবছর খোলা আকাশের নিচে এভাবেই রাত্রি যাপন করে ভাসমান মানুষেরা

বন্যা, ভাঙ্গনের মতো দুর্যোগ কিংবা ভাগ্যের ফেরে হতভাগা মানুষগুলোর অভিযোগ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মতো সরকারি সহায়তার তালিকাতেও নাম ওঠে না তাদের। তাইতো সব কষ্ট, দুর্ভোগ সঙ্গী করে বেঁচে থাকা তাদের।

এখন টেলিভিশনকে তারা বলেন, 'আমাগো ঘরদুয়ার নাই। কেউ আমাগো দেখে না। একটু সাহায্য করলে ভালো থাকতে পারতাম।'

দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন। বলেন, 'স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের বিভিন্ন কাজে উৎসাহিত করি। তারা যেন ঠিকমতো থাকতে পারে সেজন্য আমরা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি।'

মাথা গোঁজার ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে সরকারি কোন প্রকল্প নেয়ার পরামর্শ স্বেচ্ছাসেবীদের। গণমাধ্যমকর্মী জিয়া শাহীন বলেন, 'তাদেরকে অবশ্যই পুনর্বাসন করা উচিত। গৃহহীনদের যেমন ঘর দেয়া হয়েছে। তাদের জন্যও একটা আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।'

বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে রাত কাটানো মানুষগুলোর সংখ্যা ঠিক কত? এ নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই কোন দফতরে।