রাজধানীর মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ'র কার্যালয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের রতন। হাতে কিছু কাগজ নিয়ে তার এই আসা-যাওয়ার পালা চলছে দুই বছর ধরে।
বিদেশে পাড়ি জমিয়ে পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করতে চাওয়ার ইচ্ছে থেকেই শেখেন গাড়ি চালানো। এরপর একজন পেশাদার চালক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে লাইসেন্স পেতে বিআরটিএ'র সকল নিয়ম-কানুন পূরণ করেন রতন। তবে সময় অনুযায়ী হাতে লাইসেন্স না পেয়ে তা আটকে আছে ডেলিভারি স্লিপেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড না পাওয়াতে ইন্টারন্যাশনাল স্মার্টকার্ড করতে পারছেন না রতন। যার ফলে আটকে আছে বিদেশযাত্রা। বিআরটিএ'র কর্মকর্তাদের কাছে স্মার্টকার্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না।
প্রতিদিনই বিআরটিএ'র বিভিন্ন কার্যালয়ের হাতে ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে রতনের মতো শতশত স্মার্টকার্ড লাইসেন্স প্রত্যাশী ভিড় করেন।
রাজধানীর মিরপুরের বিআরটিএ'র কার্যালয়ে দেখা যায়, নতুন লাইসেন্স প্রত্যাশী কিংবা নবায়নের আবেদনগুলো সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও কার্ড সময়মতো পাচ্ছেন না অনেকেই। যাদের মধ্যে পেশাদার চালকের সংখ্যাই বেশি। লাইসেন্স না পেলেও ডেলিভারি রশিদে বিশেষ সিল দিয়ে গাড়ি চালানোর অনুমতি দিচ্ছে সংস্থাটি।
একজন জানালেন, তিনি ২ বছরে ১৫ বার এসেও পাননি স্মার্টকার্ড। এটি না থাকায় রাস্তাঘাটে সার্জেন্টদের কাছে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকার তিনপ্রান্তে তিনটি কার্যালয়ে চলে বিআরটিএ'র কার্যক্রম। সব জায়গাতেই ভিড় ও ভোগান্তির চিত্র একই রকম বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিআরটিএ'র কার্যালয়ে এসে শুধু মেলে সময় বৃদ্ধির অনুমতিপত্র। এতে যাতায়াতসহ নানা খরচ গুণতে হয় চালকদের।
মোটরযানের লাইসেন্স হিসেবে ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্টকার্ড তৈরির জন্য ২০২০ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স-এমএসপি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য চুক্তি করে বিআরটিএ। যেখানে ১২০ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ৪০ লাখ লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির।
নিজ কোম্পানিতে কার্ড তৈরি করলেও চুক্তি অনুযায়ী কার্ড সরবরাহ করতে পারছে না এমএসপি। চুক্তি অনুযায়ী বছরে ৮ লাখ করে স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও সাড়ে তিন বছরে কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে ১৬ লাখের মতো। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারাকেই কারণ হিসেবে বলছে প্রতিষ্ঠানটি। জানালেন মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের কর্মকর্তা আশরাফ বিন মুস্তফা।
এদিকে, স্মার্টকার্ড সংকটকে বৈশ্বিক সমস্যার অংশ আখ্যা দিয়ে বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলছেন, দেশে গাড়ি চালানোর জন্য ই-লাইসেন্সই যথেষ্ট। আর বিদেশগামী লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের বিষয়েও কাজ করার কথা জানান তিনি। এছাড়াও জানান এলসি জটিলতার কথা।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে প্রথমবারের মত ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্টকার্ড লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রচলন করে বিআরটিএ। এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল অবৈধ, ভুয়া এবং জালিয়াতি কার লাইসেন্স ঠেকানো। যা সাহায্য করবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেও। কিন্তু এই স্মার্টকার্ডটি হাতে পেতে একজন চালকের সময় লাগছে বছরের পর বছর। দেশে বছরে সর্বনিম্ন ৭ লাখ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন। তাই কার্ড পেতে অনেককেই বনানীতে অবস্থিত বিআরটিএ'র চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বিশেষ আবেদন করতে দেখা যায়।