শীতে রাজশাহীতে মাসকলাইয়ের রুটি আর কালাই দিয়ে তৈরি নানা পদের চাহিদা বাড়ে। এক সময়ের গ্রামের এই নাস্তা কীভাবে শহরে জনপ্রিয় হলো?
রাজশাহীর অভিজাত পাড়া নগরীর উপশহর। গোধূলি গড়িয়ে কেবল নেমেছে সন্ধ্যা। রাস্তার পাশে গনগনে চুলায় পুড়ছে মাটির খোলা। আর তাতে তৈরি হচ্ছে কালাই-রুটি।
মাষকলাই ও আতপ চালের আটা মিশিয়ে খামির তৈরি করা হয়। পরে কারিগরের নিপুণ হাতে মচমচে সুস্বাদু কালাই-রুটি তৈরি হয়। এর ঘ্রাণে আগ্রহ বাড়ে গ্রাহকদের। যা গরম খোলা থেকে তুলে সরাসরি ক্রেতাদের পাতে দেয়া হয়। সাথে থাকে পোড়া বেগুনের ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা ও কাঁচা মরিচের ঝাল। সাথে মাংসপ্রেমীদের জন্য থাকে হাঁসের কালাভূনা, হাঁসের ঝাল মাংস, গরুর মাংস, বট ও অন্যান্য ভর্তা-ভাজি। আর এসব খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন নানা শ্রেণি-পেশার ভোজনরসিক মানুষ।
ক্রেতারা বলেন, ‘বিশ্বের অনেক জায়গায় অনেক খাবার খেয়েছি। কিন্তু রাজশাহীতে এই কালাই-রুটি একবারে অন্যরকম, এর একটা নিজস্বতা আছে। এই খাবারের প্রচার-প্রসার প্রয়োজন।’
ভোজনরসিকদের কারণে এই স্ট্রিট ফুডটি এখন অভিজাত খাবার হোটেলগুলোর মেন্যুতে জায়গা করে নিয়েছে। নগরবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে কালাই রুটির এই স্বাদ নিতে আসেন অসংখ্য মানুষ। দূর শহরের অতিথিরাও স্বাদ নেন রাজশাহীর বিশেষ এই খাবারের। তাতে বিকেল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। একেকটি দোকানে দিনে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কালাই-রুটি বিক্রি হয়। ছুটির দিনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই নগরীতে দিন দিন বাড়ছে কালাই-রুটির দোকানের সংখ্যা।
বিক্রেতারা বলেন, ‘আগে রুটি ২০ টাকা করে ছিল। কিন্তু সব জিনিসের সঙ্গে এখন কালাই-রুটির দামও বেড়ে গেছে।’
গ্রাম-শহরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কালাই-রুটির চাহিদা মাষকলাইয়ের চাহিদাও বাড়িয়েছে। একইসাথে শীত মৌসুম এলে এই ডাল দিয়ে গ্রামের ঘরে-ঘরে বড়ি বানানোর ধুম পড়ে। মাষকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়োর মিশেলে তৈরি হয় কুমড়া বড়ি। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা অনেক।
রুটি, বড়ি এবং ডালসহ খাদ্য তালিকার নানা পদ সৃষ্টিকারী এই ডালের ব্যবহার বেড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৫ বছরে এর উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, জেলার নয় উপজেলার পাশপাশি পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে এই ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ছাড়াচ্ছে লক্ষ্যমাত্রাকে।