১৭৯১ সালে নড়াইলে রূপরাম রায়ের মাধ্যমে জমিদারদের গোড়াপত্তন ঘটে। পরে তার ছেলে কালীশঙ্কর রায় এ অঞ্চলে স্বতন্ত্রভাবে জমিদারি শুরু করেন। যার বংশধররা দেড়শ' বছরের বেশি সময় এ অঞ্চল শাসন করে।
কালি শঙ্কর রায়ের জমিদার মহল ছিল চিত্রা নদীর পাশে। ২০০ বছর আগে মহলের নারীদের জন্য রোমান স্থাপত্যের আদলে দৃষ্টিনন্দন ঘাট বানানো হয়। যা এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ঘাটের উপরের অংশে ২০ ফুট উঁচু ২০টি কারুকাজ করা থাম ছিল, সেখানে পালকিতে করে জমিদারবাড়ির কন্যা, জায়া ও জননীরা নামতেন। মহারানী ভিক্টোরিয়া যুগের সে ঘাট এখন চিত্রাপাড়ের রূপগঞ্জ বাঁধা ঘাট নামে পরিচিত।
এলাকাবাসী জানান, দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা দেখতে এসে সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যায়।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জমিদার বংশের সবাই কলকাতায় চলে যায়। ১৯৫০ ও ১৯৫২ সালে কয়েকজন ফিরে আসলেও নানা কারণে সব ছেড়ে আবারও চলে যান। এর মধ্য দিয়ে তাদের জমিদারির অবসান ঘটে।
১৯৮৩-৮৪ সালে নিলামে ওঠে জমিদার বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা। যেখানে পুলিশ লাইন ও সরকারি শিশুসদন গড়ে উঠেছে । এখনও ক্ষয়িষ্ণু দুইটি পিলার, একটি মঠ ও একটি সর্বমঙ্গলা মন্দির টিকে আছে।
নড়াইলের সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল কবীর টুকু বলেন, 'আমরা স্কুলে পড়ার সময় এখানে সুন্দর অট্টালিকা দেখেছি। অনেক দরজা আর রুম ছিল, দ্বিতীয় তলায় উঠলে বের হওয়ার জন্য জায়গা খুঁজে পেতাম না।'
জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। ছবি: এখন টিভি
এছাড়া জমিদারদের রেখে যাওয়া অন্তত শতকোটি টাকা মূল্যের জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবনসহ অর্ধশতাধিক বাড়ি। এসএ রেকর্ডে জমিদারদের নাম থাকলেও আরএস রেকর্ডে প্রায় তিন একর জমিতে এসেছে দখলদারদের নাম।
এমন অবস্থায় ভূমিদস্যুদের হাত থেকে বাঁচাতে চিত্রা নদী পাড়ের হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়িটিকে ‘নড়াইল ডিসি ইকোপার্কে’ রূপান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, '৩০ একর জমি উদ্ধার করে ডিসি পার্ক গড়ে তুলেছি। এর মধ্যে তিন একর জমি নিয়ে মামলা চলছে।
জমিদাররদের রেখে যাওয়া অন্তত ১০ একর জায়গা ইতোমধ্যে বেদখল হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য অন্তত শতকোটি টাকা, যা ফিরে পেতে একাধিক মামলা করেছে জেলা প্রশাসন।