অষ্টম শ্রেণির 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা' বইয়ে নিরাপদ খাবার, শারীরিক ফিটনেস, আত্মবিশ্বাসী হওয়া, রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা, যোগাযোগ, দ্বন্দ্বের সঙ্গে সন্ধি আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে 'কৈশোরের কথামালা'। যেখানে ১৬ পৃষ্ঠাজুড়ে আলোচনা করা হয়েছে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে। একেবারে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে কৈশোরের শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো।
পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে জানানো ও সচেতনতা বাড়ানোকে স্বাগত জানালেও শিক্ষাবিদরা বলছেন, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইয়ে কিশোর-কিশোরীর বিভিন্ন বিষয় যে ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে তা তাদের বয়স উপযোগী হয়নি। এতে ইতিবাচক দিকের সঙ্গে নেতিবাচক শঙ্কাও থেকে যায়।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকাল অবশ্যই আমরা শেখাবো, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু একটি প্যারায় মেয়েদের বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা আমাদের সমাজ কিংবা সংস্কৃতিতে গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু তাই নয়, এ কারণে মেয়েদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।’
বইয়ের প্রসঙ্গ কথায় লেখা- ‘বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে।’ তারপরও আমরা যে ক'টি বই পড়েছি তাতে ভুল বানান চোখে পড়ার মতো। নবম শ্রেণির 'শিল্প ও সংস্কৃতি' বইয়ে সহযোগিতা শব্দে ই-কারের জায়গায় ঈ-কার ব্যবহার, অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয়নি ণ-ত্ব বিধানের নিয়ম, 'পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়' বাক্যটি ১৫ বার ব্যবহার হলেও ১৩ বারই 'পৃথিবী' শব্দটি ভুল করে 'পৃখিবী' লেখা, 'প্রাতিষ্ঠানিক' এর পরিবর্তে 'প্রতিষ্ঠানিক'। 'পাকিস্তান' হয়েছে 'পাষ্কিস্তান'। আবার ৮ম শ্রেণির 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা' বইয়ে সুস্থ বানানটিতে য-ফলা ব্যবহার করে যেন অসুস্থই করা হয়েছে। এছাড়া বাক্য গঠনে ভুল তো আছেই।
শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, পাঠ্য বইয়ে ভুল থাকা মেনে নেয়া যায় না। বইয়ের এমন ভুলভ্রান্তি ও অসঙ্গতিকে অপ্রত্যাশিত বলছেন তিনি।
এদিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ে লেখক পরিচিতি খুবই সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। পুরনো শিক্ষাক্রমের বইয়ে যেখানে লেখকের জন্ম-মৃত্যু সাল বঙ্গাব্দ ও খ্রিস্টাব্দ তারিখসহ থাকতো। উল্লেখ থাকতো লেখকের পড়াশোনা, গুরুত্বপূর্ণ রচনা, গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননার বিষয়। সেখানে নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে কেবল বন্ধনীর ভেতরে জন্ম-মৃত্যুর খ্রিস্টাব্দ সাল রাখা হয়েছে। লেখকের জন্মস্থান পর্যন্ত রাখা হয়নি।
এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে বই লিখতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি থেকে যেতে পারে। আর বাংলা বইয়ে লেখক পরিচিতি সচেতনভাবেই সংকুচিত করা হয়েছে।’
এছাড়া, নবম শ্রেণির 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা' ও 'জীবন ও জীবিকা' বই দুটির বিষয় একেবারেই নতুন। এই শ্রেণির 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা' বইটিতে বর্তমানের যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লেখা। যেমন বিজ্ঞাপন কিভাবে শারিরীক ও মানসিক প্রভাব ফেলে, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, সাইবারবুলিং ইত্যাদি। তবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। বাকিটা অনুশীলনের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বর্তমানে যারা শিক্ষক তারা যোগাযোগ মাধ্যমের এই বিষয়গুলো শেখাতে কতটা সক্ষম হবেন?
তবে 'জীবন ও জীবিকা' ও 'ডিজিটাল প্রযুক্তি' বিষয় দুটি যুগোপযোগী বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।