শত বছর ধরে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হয়েছে কাঁসা-পিতলের তৈরি সামগ্রী। আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেই দেখা হতো এসব তৈজস। ফলে জমিদার বাড়িতে এর ব্যবহার ছিল অনেকটাই অপরিহার্য।
এখন সিরামিক, কাঁচ, প্লাস্টিক ও মেলামাইন সামগ্রীর ভিড়ে টিকতে পারছে না এই শিল্প। তবে নিয়মিত ব্যবহার না হলেও উৎসব উপলক্ষে অনেকেই ব্যবহার করেন কাঁসা-পিতলের সামগ্রী।
ক্রেতারা বলেন, আগে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে কাঁসার থালা, হাড়ি, গ্লাস দেওয়াই লাগতো। তখন স্টিলের জিনিস ছিল না। এখন হওয়াতে কাঁসার প্রচলন কমে গেছে।
যশোর চৌরাস্তার বড় বাজারের এই এলাকাটি পরিচিত ছিল কাঁসারি পট্টি নামে। যেখানে দোকানের সংখ্যা ছিল অর্ধশত। প্রতিদিন বিক্রি হত প্রায় কোটি টাকার পণ্য। তবে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২টি দোকান।
যশোরের চৌরাস্তা কাসারি পট্টির ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান। বংশ পরম্পরায় করে আসছেন এই ব্যবসা। তিনি বলেন, 'আগে কাঁসার দাম কম ছিল তাই বেচাকেনা ছিল। কিন্তু এখন দাম বাড়াতে কেউ কিনতে পারছে না। যেকারণে সবাই আস্তে আস্তে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।'
ছবিতে কাঁসার গ্লাস, যগ ও কড়াই
৯০-এর দশকে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে পিতলের কলস, পানদান ডেক ও কাঁসার জিনিসপত্র উপহার দিত। এখন সে জায়গা দখল করেছে ডিনার সেট ও কাঁচের জিনিসপত্র।
নিত্যনতুন সিরামিক, মেলামাইন ও কাঁচের সামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ পিতল কাঁসার ব্যবহার একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি কাঁচামালের দাম কমানো গেলে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
তারা বলেন, 'একটা ১ কেজি ওজনের কাঁসার থালা প্রায় ২২০০ টাকা। আর একটা পিতলের থালা ১০০০ টাকা। সেজন্য মানুষের আগ্রহ অনেক কমে গেছে।'
লেখক ও গবেষক রুকুনউদ্দৌলাহ বলেন, 'আমি নিজেও একসময় কাঁসার তৈজসপত্র ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন আর করিনা। অনেক অত্যাধুনিক সিরামিক-মেলামাইনের জিনিস পাওয়া যায় এখন। কাঁসার দামের কারণে কেউ কিনতে চায় না।'
দেশে তামা-কাসার তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেলেও বিদেশে এইসব ধাতুর তৈরি বিভিন্ন মূর্তি'র চাহিদা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা বিবেচনা নিয়ে পরিকল্পনার তাগিদ দিলেন সংশ্লিষ্টরা।