বিকেল ৫ টা ৪৭ মিনিটে বাবা আজগর আলীর কবরে তাকে সমাহিত করা হয়।
আজ ভোরে নগরীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ীর স্মৃতিবিজড়িত গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন।
শেষ বিকেলে আরও একবার চিরচেনা গেণ্ডারিয়ায় এলেন ফজলুর রহমান। সেই গেণ্ডারিয়ায়, যেখানে ৪২ টাকার পুঁজি হাতে স্বপ্নবাজ এক কিশোর থেকে দেশ সেরা উদ্যোক্তা, শিল্পপতি হয়েছেন তিনি। পুরান ঢাকার এই এলাকাটি নিরব সাক্ষী, তার শৈশব-কৈশোরের সংগ্রাম আর ১১ ভাই বোনের সংসারে নানা টানাপড়েনের।
বিকেল ৩টার দিকেই গুলশানের সিটি হাউস থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় লাশবাহী ফ্রিজারে করে। নিজ হাতে গড়া আজগর আলী হাসপাতালের সামনে তাকে দেখার এই আকুলতা অপেক্ষমাণ এলকাবাসী, স্বজনসহ অনেকেরই।
বিকেল ৪টার দিকে প্রয়াত ফজলুর রহমানকে নিয়ে নিয়ে আসা হয় ধূপখোলা মাঠে। জানাজায় অংশ নিতে তখন মাঠের প্রায় পুরোটা জুড়ে মানুষের লম্বা সারি।
নামাজের আগে মরহুমের স্মৃতিচারণ করেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও তার অসংখ্যা গুণগ্রাহীরা। জানাজায় অংশ নেয়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিরা বলেন, মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই শিল্পপতি, আগামী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় এক ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকবেন।
উত্তরাধিকাররা বলেন, তারা যেন বাবার মতই মানুষের সেবা করতে পারেন।
নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন তার হাতে গড়া ৪০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও। তারাও সাক্ষ্য দিলেন, দায়িত্ব পালনের সময় কর্তা ও কর্মীর মধ্যে পার্থক্য না থাকার কথা।
ধূপখোলা মাঠে জানাজা শেষে প্রয়াত ফজলুর রহমানকে দাফন করা হয় নগরীরর জুরাইন কবরস্থানে। অগুনতি মানুষ চোখের জলে আর শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বিদায় জানান তাকে।
এর আগে বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ীদের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার গুলশানের বাসভবন সিটি হাউসে ছুটে আসেন তার স্বজন ও শুভাকাঙ্খীরা। তারা জানান, ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সততা ও নিষ্ঠার প্রতীক ছিলেন একজন ফজলুর রহমান।
১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া পুরান ঢাকার এই সন্তান ব্যবসা শুরু করেছিলেন ১৯৭২ সালে, ৯টি সরিষা তেলের ঘানি মিলের মাধ্যমে। তার হাতে গড়া শিল্পগোষ্ঠী, সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ৪০টি, যেখানে নিয়োজিত ২৫ হাজারের মত কর্মী। বাংলাদেশের সঙ্গে বেড়ে চলা সিটি গ্রুপের রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচে বড় ফ্লাওয়ার মিল এবং ২টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
বিশিষ্ট এই শিল্পপতির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া, বাণিজ্যমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, এফবিসিসিআই সভাপতি, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানও ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। এছাড়া তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা।