দেশে এখন
0

আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে কাঁসা-পিতল

পেশা বদলাচ্ছেন কারিগরেরা

এক সময় বিয়ে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র দেওয়ার রেওয়াজ ছিলো। দারুণ নকশার দৈনন্দিন ব্যবহার্য এসব জিনিসপত্র টেকসই, মজবুত ও দামে কম হওয়ায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এর কমবেশি ব্যবহার ছিল। কালের বিবর্তনে এর ব্যবহার কমে গেলেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই এখনও এসব সামগ্রী ব্যবহার করছেন।

নওগাঁ শহরের পুরাতন আলুপট্টি একসময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখরিত থাকত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে। কাঁসা-পিতলের ছোট-বড় প্রায় ২০ টি কারখানায় কর্মসংস্থান হতো শতাধিক শ্রমিকের।

সময়ের বিবর্তনে কারখানার সংখ্যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫টিতে। এমনই একটি কারখানায় কাজ করেন কারিগর কাজল হোসেন। ৩০ বছর ধরে কাঁসা-পিতল থেকে তৈরি করছেন বিভিন্ন নকশার বাসন।

তিনি বলেন, 'এখন দোকানপাট বন্ধ। দুই-একটা দোকান থাকাতে আমরা পেটে-ভাতে চলতেসি।'

২০০০ সালের পর থেকে কমতে থাকে কাঁসা-পিতলের চাহিদা। এর পেছনে এসব ধাতবের দাম বৃদ্ধিই কারণ বলছেন কারিগররা। দশক ব্যবধানে কাঁসা কেজিপ্রতি ৭শ' টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার টাকা, পিতল ১৮০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। চাহিদা না থাকায় অনেক কারিগরই বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।

কারিগররা বলেন, 'কাঁসার দাম অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ২৫০০ টাকা কেজি। আগের অর্ধেক বিক্রিও নাই। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ।'

বাজারে ধাতুর তৈরি এসব তৈজসপত্রের বদলে স্থান নিয়েছে চিনামাটি, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র। এক সময় শহরে কাঁসা-পিতলের তৈজস বিক্রির ১০টি দোকান থাকলেও এখন কমে হয়েছে ৫টি। যেখানে দৈনিক বেচাকেনা হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, 'একটা কাঁসার থালার দাম ১১০০ টাকা। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আগে যে ব্যবসা করেছি এখন তা নেই।'

এতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সবধরনের সহায়তা দেয়া হবে, বলছেন বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তারা।

উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, 'তাদেরকে কমমূল্যে যদি কাঁচামালের যোগান দেয়া যায় তাহলে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ হবে। আমরা বিসিকের মাধ্যমে তা করবো।'

কাঁচসহ অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঁসা-পিতল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা চান এ খাতে জড়িতরা।