কুমিল্লার বাটিক গ্রামগুলোর একটি সদর উপজেলার কমলপুর। ঈদকে সামনে রেখে নারী-পুরুষ ব্যস্ত বাটিকের কাপড় তৈরিতে। সাদা সুতি কাপড়ে মোম আর নানা রংয়ের আল্পনায় সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত কারিগররা। বাটিকের চাহিদা সারাবছর থাকলেও ঈদের বাজার ধরতে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
দৃষ্টিনন্দন, টেকসই রং আর নানা আল্পনায় মুগ্ধতা ছড়ায় বাটিকের পোশাক। থ্রি-পিস, শাড়ী, ছেলেদের পাঞ্জাবী ফতুয়া, বেডশিটের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। উন্নত রং আর গুণগত মান রক্ষায় কর্মীদের অবিরাম প্রচেষ্টা।
কারিগররা বলেন, কাপড়টা সাদা আসে। তারপর মোম দিয়ে ব্লক এবং ডিজাইন করা হয়। রং দিয়ে তুলি করি। আমাদের হাতে বানানো রং, কাপড় ছিড়তে পারে কিন্তু রং উঠবে না।
কেউ কাঠ খোদাই করে নকশা তৈরি করছেন, কেউ ফুটন্ত পানিতে মোম গলিয়ে কাপড়ে ব্লক দিচ্ছেন আবার কেউবা নানা রংয়ের মিশেলে কাপড়গুলো রঙিন করে তুলছেন। মাঠে রঙিন কাপড় ছড়াচ্ছেন নারীরা। এভাবেই একটি গ্রামের বিরাট অংশ বাটিকের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত। উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই নানা প্রতিকূলতা ছাপিয়ে গ্রামীণ মানুষেরা বুনছেন স্বনির্ভরতার অর্থনীতি।
এখানকার সুতি কিংবা সিল্ক কাপড় আসে ঢাকা ও নরসিংদী থেকে। সম্মিলিত হাতের নিপুণ কাজ তৈরি করছে দেশিয় ব্র্যান্ডিং।
কাপড়ে রং মেশানো হচ্ছে এক কারখানায়। ছবি: এখন টিভি
শিরিন ডায়িংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ খোকন বলেন, 'কমলপুর, গলিপাড়া, আনন্দপুর ও লক্ষ্মীপুরে বাটিকের কাজ করে অন্তত ৪০০-৫০০ মানুষ তাদের সংসার চালায়।'
উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, 'দেশে আমাদের পণ্য ভালো বিক্রি হয়। আবার দেশের বাইরেও যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ শিল্পের চাহিদা এখন ব্যাপক।'
৬শ' থেকে ১৫শ' টাকায় মিলে বাটিকের থ্রি পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবী, বেডশিটসহ নানা পণ্য। দামে তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশিয় পোশাক নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করে স্বচ্ছলতা আনছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা। তারা বলেন, কুমিল্লা কমলপুরের বাটিকের এ পণ্য আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরেও পাঠাচ্ছি। প্রতিটা ক্রেতার রিভিউ বেশ ভালো।
ঈদ ছাড়াও সারাবছর বাটিকের চাহিদাও ব্যাপক বলছেন বিক্রেতারা। বলেন, আমরা নিজেরা যেহেতু উৎপাদনকারী তাই গ্যারান্টি দিয়েই বিক্রি করি। ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন ডিজাইনের অনেক কাপড় আনা হয়েছে। অনেকেই এ বাটিক কিনছেন।
কমলপুর গ্রামের লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি ১৯৭৫ সালে ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরা রাজ্যে কাপড়ে মোম ও রং দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শেখেন। এখন কমলপুর গলিয়ারাসহ বেশকিছু গ্রামে বাটিকের অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠেছে।