সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তের রসুলপুর গ্রামে শীতের রাতে এখনও এই পিঠা তৈরির আয়োজন চোখে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, কেউ কলা পাতা, আবার কেউ ঢলু বাঁশ পরিষ্কার করছেন। অন্যরা বাশেঁর ভেতর দিচ্ছেন বিন্নি চাল। আবার সেই বাঁশ পোড়ানোর জন্য কেউ আগুন ধরাবার কৌশল ঠিক করছেন। আর বাড়ির উঠোনের চারপাশে বসে তা উপভোগ করছেন বাড়ির সদস্যসহ ও আত্মীয়-স্বজনরা।
ভেজানো বিন্নি চাল আর কলা পাতা মুড়িয়ে বন্ধ করা হয় বাঁশের মুখ। কলাগাছের কাণ্ডের দুটি টুকরো মাটিতে পুঁতে তার উপরে চুঙ্গাগুলো সাজিয়ে খড় দিয়ে জ্বালানো হয় আগুন। এভাবে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পুড়িয়ে চুঙ্গাটি শুকনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করার পর ছুরি দিয়ে ছাল ছাড়িয়ে এই পিঠা পাওয়া যায়।
পিঠার তৈরির আয়োজক বলেন, ‘এ পিঠা তৈরির বাঁশ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তারপরও শীতের ঐতিহ্য হিসেবে আমরা পিঠা তৈরি করি।’
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠা। ছবি: এখন টিভি
এই পিঠা মাছ ভাজা, মাংস, দুধ কিংবা নারিকেলের সঙ্গে খেতে বেশ সুস্বাদু। এর ঘ্রাণ ও স্বাদে ভিন্নতা থাকায় পারিবারিক অনুষ্ঠানে এর চাহিদাও বেশি থাকে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ও মানুষ শহরমুখী হওয়ায় এ পিঠার ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
শীতের বিশেষ ও ব্যতিক্রমী এই পিঠাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ৩ বছর ধরে ব্যবসা করছেন সাউদাজ কিচেনের স্বত্বাধিকারী দুই বোন শামিমা ও সাউদা। তারা জানান, চাহিদা বাড়ায় পিঠার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
সিলেটের বাইরে ঢাকা, যশোর, খুলনা, চট্টগ্রামেও এই পিঠার চাহিদা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠা শুধু রসনাকে তৃপ্ত করে না, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের বন্ধনও সুদৃঢ় করে।