উন্মুক্ত জলাশয় কিংবা মাছ চাষের বদ্ধ পুকুর সবখানেই সৌখিন মাছ শিকারির সংখ্যা বেড়েছে রাজশাহীতে। শিকারের এই নেশা তাদের ছুটাচ্ছে দূর-দূরান্তের জলাভূমিতে।
মোটা অংকের টিকিট কেটে চাষের পুকুরে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছেন অনেকে। সেখানে নিজের ঝুলিতে মাছ টানতে টোপ তৈরিতে খরচ করছেন হাজার হাজার টাকা। এমন কয়েকজন জানান, 'আমরা শখেই মাছ ধরতে আসি। মাছ পেলে আনন্দ লাগে। এখানে প্রতি আসনের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। আরও অতিরিক্ত খরচ ৩০ হাজার।'
মাছ শিকারিদের নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। কখনো খাল-বিল কখনো বা ঘরের পাশের ঝিলপুকুর। সুখ খোঁজেন ছিপ-বড়শির খেলায়। তাতে শিকারকে উপভোগ্য করতে প্রতিনিয়তই চলে ভিন্ন গুনের সুতা-বড়শির কেনাকাটা।
ক্রেতারা বলেন, ভালো মাছ শিকারের জন্য ভালো উপকরন দরকার হয়। মাছ শিকারে ছিপ, মেশিন খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জেলায় প্রায় ৫০ হাজার পুকুর আর পদ্মা নদীসহ ১৫টির বেশি নদী-খালবিল থাকায় বাড়ছে শিকারির সংখ্যা। অবসরে, সৌখিন এই শিকারিদের নানা চাহিদার যোগান ভর করে নগরে গড়ে উঠেছে ১০টির বেশি পাইকারি ছিপ-বড়শির দোকান। যেখানে বেচাকেনা বাড়ছে প্রতিদিন।
বিক্রেতারা জানান, ১৫ থেকে ১৮ বছর যাবত এই ব্যবসার উন্নতি কল্পনাতীত। প্রতি সপ্তাহে ২৫ হাজার টাকার মত বিক্রি হয়।
রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছ শিকারের টোপ, চারসহ নানা সরঞ্জাম নগর ও দেশের বাজার ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপেও।
দেশে-বিদেশে পড়াশুনা করার পর এখন মাছ শিকারি আকিব। নগরীর ঠাকুরমারা এলাকায় তিন বিঘা জায়গার ওপর করেছেন মাছের টোপ, বড়শি ও অন্যান্য সরঞ্জামের কারখানা। দেশি মাছের অপরিকল্পিত শিকার বন্ধে, ইন্টারন্যাশনাল গেমি ফিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে একাত্মতা জানিয়ে তার এই উদ্যোগ।
প্রিমিটিভ ফিশিং বাই আকিবের পরিচালক মো. আকিব বলেন, 'আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে পিঁপড়ার ডিম ছাড়া টোপ তৈরি শুরু করি। ধীরে ধীরে এর সাড়া পাই। এখন প্রসার খুব ভালো। বর্তমানে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি।'
ভূট্টা, চিনির গাদ, নারিকেলের খৈল, বাহারি মসলা আর নিজস্ব রেসিপিতে প্রতিদিন তৈরি করছেন টনকে টন মাছের চার। যা বাজার জাতের জন্য ওজন করে বিশেষ মোড়কে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বছরে উৎপাদিত হচ্ছে অন্তত দুই টন চার।
কর্মচারিরা বলেন, এখন কাজের চাপ অনেক বেশি। সিজনে টনকে টন চার লাগে।
উৎপাদিত চার এখন দখলে নিচ্ছে মাছের টোপের বিশ্ববাজার। ঢাকা-কোলকাতার আউটলেটসহ অনলাইন মার্কেট দারাজ, অ্যামাজানের মতো বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে রেডি টোপ, চার, ছাতুসহ মাছধরার ১০টির বেশি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তাতে মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান এখন রূপ পেয়েছে ১০ কোটি টাকার সম্পদে।
ইন্টারন্যাশনাল গেমি ফিশ অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধিত প্রিমিটিভ ফিশিং ক্লাবের গবেষণা বলছে, দেশে পুকুরে মাছ শিকারের টিকিট বিক্রি, মাছের টোপ আর ছিপ বড়শির বেচাকেনা হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। আর রাজশাহীতে এর বিকিকিনি হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার।