জানুয়ারি থেকে এক নামে সর্বোচ্চ ৫ সিম; বেশি থাকলেও কমবে

১ জানুয়ারি থেকে আপনার এনআইডিতে ৫টির বেশি সিম থাকলে নতুন করে আর কোনো সিম নিতে পারবেন না।
১ জানুয়ারি থেকে আপনার এনআইডিতে ৫টির বেশি সিম থাকলে নতুন করে আর কোনো সিম নিতে পারবেন না। | ছবি: এখন টিভি
1

দেশে ক্রমবর্ধমান অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে (Upcoming National Election) সামনে রেখে মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) জানিয়েছে, এখন থেকে একজন গ্রাহকের নামে ১০টির পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫টি সিম কার্ড (Maximum 5 SIM cards per NID) নিবন্ধনের সীমাবদ্ধতা কার্যকর হতে যাচ্ছে।

একনজরে সিম কার্ড ব্যবহারের নতুন নিয়ম ২০২৫

  • নতুন সীমা (New Limit): একজন গ্রাহক একটি এনআইডির বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫টি সিম রাখতে পারবেন।
  • কার্যকরী তারিখ: আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নতুন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৫টির সীমা কার্যকর হবে।
  • অতিরিক্ত সিমের কী হবে: যাদের ১০টির বেশি সিম আছে, তাদের অতিরিক্ত সিমগুলো সংশ্লিষ্ট অপারেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করবে।
  • সিম রিপ্লেসমেন্ট শর্ত: ১০টির বেশি সিম থাকলে কোনো সিম রিপ্লেস বা পরিবর্তন করা যাবে না; আগে সংখ্যা ৫টিতে নামাতে হবে।
  • আইওটি (IoT) সিম: স্মার্ট ডিভাইস বা আইওটি ডিভাইসের জন্য বিশেষ সিরিজের সিম থাকবে, যা এই ৫টির সীমার বাইরে।
  • কেন এই সিদ্ধান্ত: সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, ফেক আইডি রোধ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • বর্তমান অবস্থা: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ১০টি সিমের সীমা ছিল, যা এখন আরও কমিয়ে ৫টি করা হচ্ছে।
  • চেক করার উপায়: আপনার এনআইডিতে কয়টি সিম আছে তা জানতে ডায়াল করুন: *১৬০০১#

১০টির বেশি সিম থাকলেই বিপদ! সিম রিপ্লেস করতে গেলেই আগে বাড়তি নম্বরগুলো বন্ধ করার শর্ত দিচ্ছে বিটিআরসি। |ছবি: এখন টিভি

আরও পড়ুন:

সিম কার্ড নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসির কঠোর পদক্ষেপ (BTRC Strict Action)

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী জানান, আগামী ১ জানুয়ারি (January 1st) থেকে কোনো গ্রাহক নতুন সিম নিবন্ধন করতে গেলে তার নামে ৫টির বেশি সিম থাকলে তিনি আর নতুন সিম নিতে পারবেন না। যাদের কাছে বর্তমানে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সিমগুলো সংশ্লিষ্ট অপারেটরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল (Automatic SIM De-registration) করা হবে।

বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ কোটি ৮০ লাখ সক্রিয় সিম (Active SIM users in Bangladesh) রয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, প্রায় ৬৭ লাখ গ্রাহকের কাছে ১০টির বেশি করে সিম কার্ড রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের অজান্তেই বায়োমেট্রিক তথ্য (Biometric data misuse) ব্যবহার করে অবৈধভাবে সিম নিবন্ধন করার ফলে এই অস্বাভাবিক সংখ্যা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন:

অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া ও আইওটি ডিভাইসের নতুন সিরিজ (Operator Reaction & IoT Series)

সরকারের এই সিদ্ধান্তে মোবাইল অপারেটররা (Mobile Operators) যেমন গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। অপারেটরদের মতে, সিমের সংখ্যা কমালে সরকারের রাজস্ব হ্রাস (Revenue loss) পেতে পারে এবং ডিজিটাল বৈষম্য বাড়তে পারে। তবে বিটিআরসি জানিয়েছে, স্মার্ট ডিভাইস বা আইওটি ডিভাইসের (IoT devices) জন্য বিশেষ সিরিজের সিম (Special series SIM for IoT) বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে, যাতে পেশাগত কাজে কোনো বাধা না আসে।

সিমের সংখ্যায় লাগাম! ১ জানুয়ারি থেকে এক এনআইডিতে ৫টির বেশি সিম নয়। সুরক্ষিত থাকুন, নিরাপদ টেলিকম সেবা নিশ্চিত করুন। |ছবি: এখন টিভি

সিম কার্ড ব্যবহারে বিশ্বে নবম বাংলাদেশ: উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে শীর্ষ তালিকায়

বিশ্বজুড়ে মোবাইল সিম কার্ড (Mobile SIM Card) ব্যবহারের দৌড়ে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। সিম কার্ড ব্যবহারের পরিসংখ্যানে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন নবম (Bangladesh 9th in Global SIM usage) অবস্থানে। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, উন্নত প্রযুক্তির দেশ হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান এবং জার্মানির মতো রাষ্ট্রগুলোও সিম ব্যবহারের সংখ্যায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান (Global Ranking)

আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা ও বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন প্রায় ১৯ কোটির কাছাকাছি। এই বিপুল সংখ্যার কারণে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে, যেখানে পিছিয়ে আছে:

  • ইউরোপীয় দেশ: জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য (Germany, France, UK)।
  • এশীয় দেশ: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম (Japan, South Korea, Thailand, Vietnam)।
  • অন্যান্য: অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা (Australia & Canada)।

আরও পড়ুন:

বিপুল সিম ব্যবহারের কারণ ও চ্যালেঞ্জ (Reason & Challenges)

বিটিআরসির (BTRC) তথ্যমতে, বাংলাদেশে একজন গ্রাহকের একাধিক সিম (Multiple SIM cards per user) ব্যবহারের প্রবণতা এবং সুলভ মূল্যে সিম পাওয়ার সুযোগ এই সংখ্যা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে এই বিশাল সংখ্যা যেমন ডিজিটাল বিপ্লবের জানান দিচ্ছে, তেমনি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার মতো নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। বর্তমানে সরকার এক এনআইডিতে সিমের সংখ্যা ৫টিতে (SIM limit per NID) নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

"সিম ব্যবহারে বিশ্বে নবম স্থানে বাংলাদেশ! ১৮ কোটি ৮০ লাখ সিমের এই বিশাল বহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে গ্রাহক প্রতি সর্বোচ্চ ৫টি সিমের সীমা নির্ধারণ করেছে সরকার। |ছবি: এখন টিভি

বাংলাদেশে মোবাইল সিম গ্রাহক ১৮ কোটি ৮০ লাখ: ১০ বছরে বেড়েছে সাড়ে ৫ কোটি

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে এক অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (BTRC) অক্টোবর মাসের সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সক্রিয় মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা (Active mobile SIM users) প্রায় ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপারেটর ভিত্তিক গ্রাহক সংখ্যা (Operator-wise Subscribers)

বর্তমানে মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

  • গ্রামীণফোন (Grameenphone): ৮ কোটি ৫৯ লাখ গ্রাহক।
  • রবি আজিয়াটা (Robi Axiata): ৫ কোটি ৭৫ লাখ গ্রাহক।
  • বাংলালিংক (Banglalink): ৩ কোটি ৭৯ লাখ গ্রাহক।
  • টেলিটক (Teletalk): ৬৬ লাখ ৭০ হাজার গ্রাহক।

আরও পড়ুন:

এক নজরে ১০ বছরের প্রবৃদ্ধি (10-Year Growth at a Glance)

২০১৫ সালে দেশে সিম ব্যবহারকারী ছিল ১৩ কোটি ৩৭ লাখ। যা ২০২০ সালে ১৭ কোটিতে পৌঁছায়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৯৯ লাখ। গত কয়েক বছরের তুলনামূলক চিত্র:

  • ২০২৪ (অক্টোবর): ১৮ কোটি ৯৯ লাখ।
  • ২০২৩ (অক্টোবর): ১৮ কোটি ৯৬ লাখ।
  • ২০২২ (অক্টোবর): ১৮ কোটি ১৬ লাখ।
  • ২০২১ (অক্টোবর): ১৮ কোটি ১৩ লাখ।

১০টির বেশি সিম থাকলে রিপ্লেসমেন্ট বন্ধ!

দেশে মোবাইল সিম ব্যবহারের এক অদ্ভুত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC)। সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মাত্র ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫ জন প্রকৃত গ্রাহকের হাতে রয়েছে ১৮ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি সক্রিয় সিম কার্ড (Active SIM cards)। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিজন গ্রাহকের কাছে প্রায় ৩টি করে সিম রয়েছে।

সিম ব্যবহারের পরিসংখ্যান (SIM Usage Statistics)

বিটিআরসির পর্যালোচনায় দেখা গেছে:

  • ১ থেকে ৫টি সিম: প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহকের নামে ১ থেকে ৫টি সিম নিবন্ধিত রয়েছে।
  • ৬ থেকে ১০টি সিম: দেশের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের কাছে ৬ থেকে ১০টি করে সিম কার্ড (6 to 10 SIM cards per user) রয়েছে।
  • ১০টির বেশি সিম: বিশাল একটি অংশের কাছে ১০টিরও বেশি সিম রয়েছে, যা মূলত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন:

সিম রিপ্লেসমেন্টে নতুন শর্ত (New Rules for SIM Replacement)

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যার কাছে বর্তমানে ১০টির বেশি সিম আছে, তিনি যদি কোনো সিম হারিয়ে ফেলেন বা নষ্ট হওয়ার কারণে সিম রিপ্লেস (SIM Replacement) করতে যান, তবে তাকে আগে অতিরিক্ত সিমগুলো বন্ধ করতে হবে। তার সিম সংখ্যা ৫টিতে (Reduce SIM limit to 5) নামিয়ে আনলেই কেবল তিনি নতুন বা রিপ্লেস করা সিম সচল করতে পারবেন।

সিমের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তে গ্রাহকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া: ভোটার আইডিহীনদের দুশ্চিন্তা

বিটিআরসির (BTRC) সিম কার্ডের সংখ্যা কমানোর নতুন সিদ্ধান্তে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া (Mixed reaction from subscribers) দেখা গেছে। একদিকে অপরাধ দমনের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যবহারিক কিছু সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন:

গ্রাহকদের ভাবনা ও বির্তক (Subscribers' Concerns)

ভোটার আইডি বিহীনদের সমস্যা (No NID, No SIM?): যাদের এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) তৈরি হয়নি বা যারা ১৮ বছরের নিচে, তারা কীভাবে সিম নিবন্ধন করবেন তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। আগে অনেকের সিম পরিবারের বয়স্কদের নামে নিবন্ধিত থাকতো, যা এখন সংখ্যা সীমাবদ্ধতার কারণে কঠিন হয়ে পড়বে।

যথেষ্ট মনে করছেন অনেকে (Adequate Limit): অন্যদিকে সচেতন গ্রাহকদের একাংশ মনে করছেন, পরিবারের চারজন সদস্য থাকলে প্রত্যেকের ৫টি করে মোট ২০টি সিমের (Total 20 SIMs for a family of 4) সুযোগ থাকবে, যা একটি পরিবারের স্বাভাবিক ও পেশাগত ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।

বিটিআরসির এই উদ্যোগ মূলত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে (Crime prevention) অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহারের পথ বন্ধ করার জন্য নেওয়া হয়েছে।



এসআর