একনজরে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেটের মূল পরিবর্তনসমূহ:
- নামকরণ: সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫।
- আধা-স্বায়ত্তশাসিত শব্দ বিলুপ্তি: আগের গেজেটে থাকা 'আধা-স্বায়ত্তশাসিত' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
- ৩২ বছরের ঊর্ধ্বসীমা রক্ষা: যদি কোনো সংস্থার নিজস্ব বিধিতে নির্দিষ্ট কোনো পদের জন্য বয়সসীমা ৩২ বছরের বেশি থাকে (যেমন: ডাক্তার বা শিক্ষক), তবে সেই বর্ধিত বয়সসীমা এখনো কার্যকর থাকবে।
- কার্যকারিতা: আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নতুন সংশোধনীটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন:
সংশোধিত অধ্যাদেশের মূল পরিবর্তনসমূহ (Key Amendments)
প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১১ নং অধ্যাদেশটি সংশোধনের মাধ্যমে বেশ কিছু আইনি পরিবর্তন আনা হয়েছে:
‘আধা-স্বায়ত্তশাসিত’ শব্দ বিলুপ্তি (Deletion of 'Semi-Autonomous'): নতুন অধ্যাদেশে শিরোনাম, প্রস্তাবনা এবং বিভিন্ন ধারা থেকে ‘আধা-স্বায়ত্তশাসিত’ (Semi-autonomous) শব্দটি এবং সংশ্লিষ্ট চিহ্নসমূহ বাদ দেওয়া হয়েছে।
৩২ বছরের বেশি বয়স বহাল (Age limit above 32 remains): অধ্যাদেশের নতুন ৩ক ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা বা প্রবিধানমালায় (Recruitment Rules) সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা আগে থেকেই ৩২ বছরের বেশি নির্ধারিত ছিল, সেই বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে উক্ত বর্ধিত বয়সসীমা অপরিবর্তিত ও বহাল থাকবে (Existing age limits above 32 will remain unchanged)।
অবিলম্বে কার্যকর (Effective Immediately): এই অধ্যাদেশটি ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে এবং এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন:
চাকরিপ্রার্থীদের (Job seekers) দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর (Entry age limit 32) নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশেষায়িত পদগুলোর বয়সসীমা নিয়ে সৃষ্ট অস্পষ্টতা দূর করা হলো।
সংশোধিত গেজেট ও বিসিএস (BCS): সাধারণ ও বিশেষ বিসিএস-এর বয়সের ব্যবচ্ছেদ
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশের ফলে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের একটি ধোঁয়াশা দূর হয়েছে। তবে সাধারণ এবং বিশেষ বিসিএস-এর ক্ষেত্রে এর প্রভাব কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
১. সাধারণ বিসিএস (General BCS)
সাধারণ বিসিএস-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ইতিবাচক। আগে সাধারণ ক্যাডারে আবেদনের বয়সসীমা ছিল ৩০ বছর। নতুন গেজেট অনুযায়ী এখন থেকে সাধারণ ক্যাডার (যেমন: প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল ক্যাডারে আবেদনের বয়স হবে ৩২ বছর। বয়সের কারণে যারা আগে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হারাতেন, তারা এখন অতিরিক্ত ২ বছর সময় পাবেন।
২. বিশেষ বিসিএস (Special BCS)
বিশেষ বিসিএস সাধারণত ডাক্তার (স্বাস্থ্য) বা বিশেষ কোনো কারিগরি পদের জন্য নেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশেষ করে ডাক্তারদের (স্বাস্থ্য ক্যাডার) জন্য বয়সসীমা ৩৪ বছর নির্ধারণের কথা রয়েছে। নতুন গেজেটে বলা হয়েছে, যেসব পদের নিয়োগ বিধিমালায় বয়স ৩২-এর বেশি আছে, তা বহাল থাকবে। যেহেতু বিশেষ বিসিএস-এর ক্ষেত্রে ডাক্তারদের জন্য আগে থেকেই ৩২ বা তদূর্ধ্ব বয়সসীমা ছিল, তাই নতুন গেজেটে তাদের সেই সুবিধাটি (৩৪ বছর) আরও সুসংহত হলো।
৩. বিসিএস-এর সংখ্যা ও বয়স (অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা)
বয়স ৩২ করা হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত এখানে যুক্ত করা হয়েছে: একজন প্রার্থী তার জীবনকালে সর্বোচ্চ ৩ বার বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবেন। অর্থাৎ ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত সময় থাকলেও একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি পরীক্ষা দিতে পারবেন না। এটি প্রতিযোগিতার ধরনে বড় পরিবর্তন আনবে।
৪. মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী কোটা
মুক্তিযোদ্ধা কোটার সন্তানদের জন্য আগে থেকেই বয়সসীমা ৩২ ছিল। সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ৩২ হওয়ায় এখন সবার জন্য প্রাথমিক এন্ট্রি লেভেল সমান হলো। প্রতিবন্ধী ও বিশেষ ক্যাটাগরির জন্য এই বয়সসীমা ৩৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে, যা সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আরও স্পষ্ট করা হবে।
বিসিএস এর ধরন আগে যা ছিল বর্তমান গেজেট অনুযায়ী সাধারণ ক্যাডার ৩০ বছর ৩২ বছর শিক্ষা/কারিগরি ক্যাডার ৩০ বছর ৩২ বছর স্বাস্থ্য ক্যাডার (ডাক্তার) ৩২ বছর ৩৪ বছর (প্রস্তাবিত/বহাল) প্রতিবন্ধী প্রার্থী ৩২ বছর ৩৪ বছর (প্রস্তাবিত/বহাল) অংশগ্রহণের সুযোগ আনলিমিটেড (বয়স থাকা পর্যন্ত) সর্বোচ্চ ৩ বার
সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর-FAQ
প্রশ্ন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বর্তমান সর্বোচ্চ বয়সসীমা কত?
উত্তর: সাধারণ প্রার্থীদের জন্য সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা এখন ৩২ বছর। আগে এটি ছিল ৩০ বছর।
প্রশ্ন: বিসিএস (BCS) পরীক্ষায় কি বয়সের এই পরিবর্তন প্রযোজ্য?
উত্তর: হ্যাঁ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (BCS) সকল ক্যাডারে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ কতবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন?
উত্তর: সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৩ বার বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।
প্রশ্ন:৩২ বছরের বেশি বয়সসীমা কি কোথাও বহাল থাকবে?
উত্তর: হ্যাঁ, নতুন অধ্যাদেশের ৩ক ধারা অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়োগ বিধিতে আগে থেকেই বয়সসীমা ৩২ বছরের বেশি (যেমন ৩৫ বা ৪০ বছর) ছিল, সেই নির্ধারিত বয়সসীমা আগের মতোই বহাল থাকবে।
প্রশ্ন: ডাক্তার এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা কত?
উত্তর: বিশেষ ক্যাটাগরির প্রার্থী যেমন ডাক্তার এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৪ বছর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন:স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কি এই নিয়ম কার্যকর হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল কর্পোরেশন এবং স্ব-শাসিত সংস্থার ক্ষেত্রেও এই ৩২ বছর বয়সসীমা কার্যকর হবে।
প্রশ্ন: ‘আধা-স্বায়ত্তশাসিত’ শব্দটি কেন বিলুপ্ত করা হয়েছে?
উত্তর: আইনি অস্পষ্টতা দূর করতে এবং সকল সংস্থাকে একই সংজ্ঞার আওতায় আনতে ২০২৫ সালের সংশোধিত গেজেটে ‘আধা-স্বায়ত্তশাসিত’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে কি ৩২ বছর প্রযোজ্য?
উত্তর: না। প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ (সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা আগের মতোই বহাল থাকবে।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের বয়সের কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: নতুন গেজেটে সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের জন্য আলাদা করে বয়স বাড়ানোর কথা উল্লেখ নেই, তাদের জন্য এটি আগে থেকেই ৩২ ছিল।
প্রশ্ন: এই নতুন অধ্যাদেশটি কবে থেকে কার্যকর হবে?
উত্তর: অধ্যাদেশে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থাৎ গেজেট প্রকাশের পর থেকে নতুন সকল নিয়োগে এই নিয়ম প্রযোজ্য।
প্রশ্ন: অবসরের বয়সসীমা কি বাড়ানো হয়েছে?
উত্তর: না, এই অধ্যাদেশটি শুধুমাত্র চাকরিতে প্রবেশের (Entry Age) বয়স নিয়ে। অবসরের বয়সসীমা (Retirement Age) বর্তমানে যা আছে তা-ই বহাল থাকবে।
প্রশ্ন: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (NTRCA) চাকরির ক্ষেত্রে কি এই নিয়ম খাটবে?
উত্তর: সাধারণত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। যেহেতু গেজেটে বলা হয়েছে ৩২ বছরের বেশি থাকলে তা বহাল থাকবে, তাই এনটিআরসিএ-এর ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বহাল থাকার সম্ভাবনা বেশি।
প্রশ্ন: নতুন এই অধ্যাদেশের নাম কী?
উত্তর: ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’।
প্রশ্ন: বিসিএস বহির্ভূত সরকারি চাকরির জন্য নিয়ম কী?
উত্তর: বিসিএস ছাড়া সকল স্তরের সরকারি চাকরির জন্য প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছরই হবে।
প্রশ্ন: যারা আগে আবেদন করেছেন বা পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের কি কোনো সমস্যা হবে?
উত্তর: না, এই নিয়মটি মূলত নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং নতুন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সাধারণত তাদের বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।





