দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিটিআরসি ভবনের সামনে মূল সড়কের একপাশে ব্যবসায়ীদের অবস্থান, আর অন্যপাশে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন বিক্ষোভকারী দাঁড়িয়ে থাকায় পুরো সড়ক কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এতে আগারগাঁওয়ের জাতীয় আর্কাইভ ভবন থেকে শুরু করে শ্যামলী, শিশুমেলা এবং আশপাশের সড়কগুলোয় তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। অনেক মোটরসাইকেল ও গাড়িচালক আটকে পড়ে দুর্ভোগে পড়েন।
আরও পড়ুন:
এক মোটরসাইকেল আরোহী ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘বলা নেই কওয়া নেই—হঠাৎই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এত ভোগান্তি সহ্য করার কোনো মানে নেই। প্রায় প্রতিদিনই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দিনের বেশিরভাগ সময় সড়কের জ্যামেই আটকে থাকতে হচ্ছে। এভাবে রাজধানী চলতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কঠোর না হলে সমাধান আসবে না। এলাকাটিতে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থাকায় রোগী নিয়ে স্বজনরাও চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।’ দ্রুত সমাধানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সরকার ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে ব্যবহৃত প্রতিটি মোবাইল ফোনকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। অবৈধভাবে আনা ফোন এরপর ব্যবহার করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বৈধভাবে আমদানির শুল্কহার কমানো এবং প্রবাসীদের জন্য মোবাইল আনার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাও ঘোষণা করেছে সরকার।
তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নতুন এই নিয়ম বাস্তবায়ন হলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা দাবি করছেন, এই নীতির মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হবে এবং গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম আরও বাড়বে।
এরইমধ্যে ব্যবসায়ীদের পক্ষে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সাত সদস্যের একটি দল বিটিআরসির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘স্মার্টফোন সহজে মানুষের হাতে পৌঁছানোকে সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ তিনি উল্লেখ করেন, স্মার্টফোন উৎপাদক ও আমদানিকারকদের মধ্যে ট্যাক্স পার্থক্য যৌক্তিক হতে হবে। ক্ষমতায় গেলে আমদানিকারকদের ‘ট্যাক্স ফ্রি’, বন্ডেড ওয়্যারহাউস ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির সুবিধা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ এ ধরনের ব্যবসা বন্ধের ওপর জোর দিয়ে তিনি জানান, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এনইআইআর নীতি সকল অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পুনর্বিবেচনা করা হবে। তার মতে, বর্তমান পদ্ধতিতে এনইআইআর বাস্তবায়িত হলে স্মার্টফোনের বাজার একচেটিয়া হয়ে যাবে এবং দাম আরও বাড়বে।
এছাড়া নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যে নীতির মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ মানুষের পেশা ঝুঁকিতে পড়ে, তা কোনোভাবেই জনবান্ধব নীতি হতে পারে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অংশীজনদের মতামত ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী প্রয়োগের উদাহরণ। সাকি বলেন, ‘সরকার যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে গিয়ে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে, তবে সেটি গণবিরোধী অবস্থান ছাড়া আর কিছুই নয়।’




