মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, ত্যাগ আর রাষ্ট্রচিন্তার পুনরালোচনায় শুরু হচ্ছে বিজয়ের মাস। চুয়ান্ন বছর পার হলেও নাগরিক আক্ষেপের শেষ হলো কি? আর স্বাধীনতার স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের দূরত্ব কতটা কমেছে, নাকি আরও লম্বা হয়েছে সেই ফারাক?
দীর্ঘ শাসনের নানা স্তর, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার দাপট, দলীয়করণ আর প্রশাসনিক অচলায়তন বদলে দিয়েছে মানুষের প্রত্যাশা আর হতাশার চক্র। বিজয়ের চেতনা প্রতি বছরই ঘষামাজা হয়। কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ কতটা দেখা যায়, প্রশ্ন ওঠে সেখানেই।
সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু ৫৪ বছরেও সেটি করা যায়নি। সুতরাং বিজয়ের যে স্বাদ, স্বাধীনতার যে আনন্দ, সেটা থেকে কিন্তু এ বৃহত্তর অংশ, এ জনগোষ্ঠী বঞ্চিত।’
বিজয়ের তকমার মেকী ভারে ক্লান্ত সমাজে চব্বিশ নিয়ে আসে হঠাৎ গণজোয়ার। পরিবর্তনের নতুন আহ্বান।
আরও পড়ুন:
চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী উত্তাল সময় মানুষের মনে জাগায় সুশাসনের আশা, জবাবদিহির দাবি, দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি আর রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তির আকাঙ্ক্ষা।
সমাজ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘একাত্তরের বিজয় হলো আমাদের স্বাধীন দেশের জন্য, আর চব্বিশের বিজয় হলো এই যে আমাদের একটা স্বাধীন দেশ হয়েছে, এখানে বৈষম্যহীন সমাজ বা বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তৈরি হওয়া, মানুষের ন্যায্যতা এবং অধিকারের প্রসঙ্গ তৈরি হওয়া, মানুষে মানুষে ভেদাভেদের প্রসঙ্গগুলো যেন না থাকে, সেই পরিবেশ তৈরি করার জন্য।’
অর্থনৈতিক মুক্তিতেও চরম বৈষম্যে গণমানুষের আবেদন। রাজনৈতিক সংস্কারের ভিড়ে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া বঞ্চিত থেকেছে বলে দাবি অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ, সেটা কিন্তু এখনো অর্জন করা যায়নি। এ স্বপ্নটা এখনও অধরা। তখনও সমাজে ব্যাপক বৈষম্য ছিল, এখনও বৈষম্য আছে এবং শহরাঞ্চলে যে বৈষম্য, বিশেষ করে আয় বৈষম্য, সেটা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। সেটা এরই মধ্যে “রেড মার্ক” ক্রস করেছে।’
চুয়ান্ন বছরের পথে বিজয়ের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে আর কতটা রয়ে গেছে অপূর্ণ, প্রতিশ্রুতির ভাঁজে, তার উত্তর খুঁজছে সাধারণ মানুষ। কারণ, উত্তর আসবেই বিজয়ের আনকোরা ভোর নিয়ে।





