পেঁয়াজের লাগাম টানতে ‘দ্রুত আমদানির’ সুপারিশ

পেঁয়াজের আড়ত
পেঁয়াজের আড়ত | ছবি: সংগৃহীত
0

প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা বজায় থাকে। এবারও নিয়মে ব্যতিক্রম হয়নি। গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে। কমিশন বলছে, এক কেজি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকার ওপরে গেলে দ্রুত আমদানির অনুমতি দেয়া যেতে পারে।

হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ কী


ট্যারিফ কমিশন গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বাণিজ্যসচিব ও কৃষিসচিবকে চিঠি পাঠিয়ে এ সুপারিশ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের উচ্চমূল্যের সুবিধা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, বরং মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে এবং ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশে পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন, স্থানীয় বাজারমূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য, বিদ্যমান আমদানি শুল্কসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

পেঁয়াজের বাজারে আগুন,

সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে ট্যারিফ কমিশন বলছে, ২০২৩ সালের মার্চে পেঁয়াজের মূল্য গড়ে কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা ছিল, যা নভেম্বরে দাঁড়ায় ১১৫ টাকায়। অর্থাৎ, মার্চের তুলনায় নভেম্বরে দাম বাড়ে ২৪৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের এপ্রিলে গড় মূল্য ছিল ৬৩ টাকা, যা নভেম্বরে বেড়ে হয় ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় নভেম্বরে দাম বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে সর্বনিম্ন দর ছিল ৪২ টাকা, যা নভেম্বরে ১৫০ শতাংশ বেড়ে হয় ১০৫ টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম মার্চ-এপ্রিলের তুলনায় নভেম্বরে ১০০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন:

কবে কমবে পেঁয়াজের দাম

আজকের পেঁয়াজের বাজার দর

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর পেঁয়াজের আমদানি খুব বেশি হয়নি। দেশি পেঁয়াজের ওপর বাজার নির্ভর ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও, এখন তা কমে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে। তখন দাম কমবে। নভেম্বরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আমদানিকারকদের একটি অংশ আমদানির অনুমতি না পেয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ মুহূর্তে আমদানির অনুমতি দিলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি প্রধানত ভারত থেকে হয়। এছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আসে। গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য।

অন্যদিকে, দেশে গত অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন, তবে সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে ৩৩ লাখ টন বাজারে এসেছে।

আমদানির খবরে কমেছে পেঁয়াজের দাম

আজকের পেঁয়াজের দাম কত

আমদানির অনুমতি দিচ্ছে এমন খবরে একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, হিলি বাজারে একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম আরও কমবে বলে দাবি বিক্রেতাদের।

ইএ