জাপানে একদিকে কমছে জন্মহার অন্যদিকে বাড়ছে বয়স্কদের সংখ্যা। এতে করে কমছে কর্মক্ষমদের সংখ্যা। ২০৪০ সাল নাগাদ দেশটিতে শ্রমিক ঘাটতি ১ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ক্রমবর্ধমান শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নিয়োগ দিতে চায় দেশটি।
টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীর আওতায় আগামী পাঁচ বছর এই কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা দেশটির। ইতোমধ্যে তিন ধাপে ২৬ হাজার কর্মী নিয়োগের ঘোষণাও দিয়েছে তারা। জাপানিজ ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরেও দেখা গেলো তরুণদের জাপান যাত্রায় আগ্রহ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জাপানে জীবনযাপন যেভাবে করতে হবে সেটা তারা এখান থেকে শোখানোর চেষ্টা করে। জাপানে যেতে আগ্রহী। সেখানে গেলে জীবনযাত্রা আরও উন্নত হবে মনে করি।’
দক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে ভাষা, কারিগরি শিক্ষা, পেশাগত দক্ষতা, শারীরিক যোগ্যতা, শিষ্টাচার ও সংস্কৃতির উপর মূল্যায়ন করে জাপান। কাজের ভিসা বা শিক্ষার্থী ভিসায় জাপান যাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত জাপানিজ ভাষায় দক্ষতা অর্জন। প্রশিক্ষণে ব্যয় হয় চার থেকে দশ মাস।
জাপান বাংলা প্রেসের সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, ‘জাপান আসার ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ভাষা। আপনি যদি জাপানি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন তাহলে জাপান আপনার জন্য অবধারিত।’
আরও পড়ুন:
সরকারি-বেসরকারি ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী বাড়লেও জাপানিজ ভাষার যোগ্য প্রশিক্ষক না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সাবেক জাপান প্রবাসী ও সাধারণ মানের প্রশিক্ষক দিয়ে চলছে বহু প্রতিষ্ঠান। এতে করে জাপান যাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হন অনেকে।
বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের ন্যারেটিভ ট্রেইনার প্রতিটা সেন্টারে দেয়া সম্ভব হয় না। পাশাপাশি এক্সপার্ট ট্রেইনাররাও লোকাল সেন্টারে গিয়ে কাজ করতে চায় না।
গত ৩ বছরে জাপানে মিয়ানমার, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার কর্মী বৃদ্ধি পেলেও তুলনামূলক কর্মী বাড়েনি বাংলাদেশের। জাপানের ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এজেন্সি'র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সাল শেষে জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এরমধ্যে ১০ হাজার রয়েছেন শিক্ষার্থী ভিসায়। গতবছর জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান ৩০ জনে মতো কর্মী পাঠাতে সক্ষম হলেও বেশিভাগ প্রতিষ্ঠান চাহিদা পাওয়া শর্তেও বছর শেষে ১০ ভাগের ১ ভাগ কর্মীও পাঠাতে পারেনি।
সাদিয়াটেক কোম্পানি লিমিটেডের সিইও সানাউল হক বলেন, ‘জাপানের অথরিটির সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো করতে হবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ধারণা করা হতো যে তারা হয়ত ওখানে গিয়ে অন দ্যা স্পট কাজটা শিখবে। কিন্তু এখন সারা পৃথিবীতেই টেকনোলজি অ্যাডভান্স হওয়ার কারণে সাধারণ শ্রমিকের ডিমান্ডটা কমে যাচ্ছে এবং দক্ষতার ওপর জোড় দেয়া হচ্ছে।’
জাপানে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জাপান সেল গঠন করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তারা ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি।
জাপান থেকে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক এনে দেশের প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে টোকিও বাংলাদেশ দূতাবাস। সরকারি তালিকাভুক্ত এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের তাগাদাও তাদের।





