জুলাই সনদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করেই শেষ হলো ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা

ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠক
ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠক | ছবি: এখন টিভি
0

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করেই আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো দলগুলোর সাথে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হলেও ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে এক জায়গায় আসতে পারেনি দলগুলো। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়ে সাত মাসের দীর্ঘ বৈঠকের সুরাহা হলো ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও ১০টি মৌলিক সংস্কারের নোট অফ ডিসেন্ট দিয়ে।

এক ধরনের নাটকীয়তার মধ্যে দিয়েই মূলত শেষ হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী ৩২টি দলের অংশগ্রহণে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ খ্যাত এই মিনি পার্লামেন্টের।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে দলগুলোর সাথে বৈঠক শুরুর ঘণ্টা দুয়েকে আলোচনার অগ্রগতি শঙ্কা বাড়ায় দিন গড়ানোর। কিন্তু আলোচনার ইতি টানতে দলগুলোর অনড় অবস্থানে বাদ মাগরিব সিদ্ধান্ত হয় আলোচনা সমাপ্তির।

রাষ্ট্র সংস্কারের জটিল সব বিষয় নিয়ে এ হল রুমেই দিনের পর দিন বিতর্কে মেতেছিলো নেতারা। অথচ রাত ১০ টার পর সমাপনীর মুহূর্তে স্মৃতি রোমন্থনের পাশাপাশি ছিলো রাজনৈতিক বিনয়।

তবে শেষ বৈঠকটিও শেষ হয় সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে দিয়ে। গণভোটের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত রয়ে যায়। নিজেদের পূর্বের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে এনসিপি, সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি তাদের। গণঅধিকার পরিষদের বক্তব্যে ওঠে আসে সনদ বাস্তবায়নে সংসদের দ্বৈত ভূমিকার প্রসঙ্গ। আর এবি পার্টির অভিযোগ বিএনপি জামায়াত ও এনসিপির জন্যই হচ্ছেনা ঐকমত্য।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেন, ‘তিনটা দলের একটা বিভেদ বা ইগো জনিত সমস্যার কারণে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারছি না।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের কথা অনেকে বলেছেন যে তিন বা চারটা ব্যালটে তো আমরা দিই। তিন বা চারটা ব্যালটে তো আমরা মার্কার মধ্যেই সিল মারি। গণভোটের ক্ষেত্রে তো এটা ঘটবে না। এক্ষেত্রে গণভোট আমরা যদি আগে করতে পারি আমার মনে হয় বেটার হবে।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, সে আকাঙ্ক্ষা জনগণ পূরণ করলো ভোট দেয়ার মাধ্যমে। এবং যেদিন প্রথম অধিবেশন হবে সেদিন এটার অনুমোদন দিতে হবে আমরা সে প্রস্তাব রেখেছি।’

আরও পড়ুন:

জামায়াতেরও দাবি সনদ বাস্তবায়নে সংসদের দ্বৈত ভূমিকা ও জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আরও কিছু ইসলামী দল আমরা বলেছি যে গণভোটের পক্ষে সকলে ঐক্যমত্য হয়েছে। এবং নভেম্বরের মাজেই গণভোটটা আলাদাভাবে হয়ে যাওয়া দরকার। এটা সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ও সহজতর ভোট।’

এদিকে বিএনপিসহ তার সমমনা দলগুলো চায় নির্বাচনের দিনেই গণভোট। এসময় জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নির্বাচন পূর্ব গণভোটের দাবি থেকে সরে আসার আহ্বান জানায় বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা একইদিনে জনগণের সম্মতির জন্য এ গণভোটের আয়োজনের পক্ষে মত দিলে আমরা সবাই একমত হয়ে যেতে পারবো। আর যদি ভিন্নমত থাকে সে ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে চাই না। সবারই ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার আছে।’

দীর্ঘ আলোচনার সমাপ্তি হয় কমিশনের সহসভাপতি বক্তব্যের মাধ্যমে। মতপার্থক্য রয়ে গেলেও আগামী ১৫-১৬ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে দলগুলোকে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করাতে চায় কমিশন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একটা অভূতপূর্ব কাজ সম্পাদন করতে পেরেছি। সকলে মিলে এ সময়টাতে। আমি মনে করি এটা মাত্র শুরু। আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ এক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে এ আমরা আশা করি।’

আলোচনা শেষ হলেও গণভোট প্রক্রিয়ার পিঠে ঝুলে রইলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। কমিশন সংশ্লিষ্টদের মত সনদের বাস্তবায়ন কোন প্রক্রিয়ায় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত অবধি।

ইএ