জাতির উদ্দেশে ভাষণের শুরুতেই ড. ইউনূস বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসংবাদ অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’ তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান টেলিফোনে তাকে এই দুঃখজনক সংবাদ জানিয়েছেন।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই অমর সৈনিককে মহান আল্লাহ যেন শহিদ হিসেবে কবুল করেন।’ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবার, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে ঘোষণা দেন, শহিদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে তার অকাল মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
আরও পড়ুন:
এছাড়া শুক্রবার বাদ জুম্মা দেশের সব মসজিদে ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকবে বলে জানান তিনি।
ড. ইউনূস সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তারা হাদির চিকিৎসায় আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন। বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক; তিনি ব্যক্তিগতভাবে হাদির পরিচর্যা করেছেন এবং নিয়মিত চিকিৎসার খোঁজখবর দিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘বিপ্লবী রক্তে উজ্জীবিত এই তরুণ নেতা প্রতিবাদের এক আইকন ছিলেন। তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে বিপ্লবীদের ভয় দেখানোর অপচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে। ভয়, সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ওসমান হাদির একান্ত ইচ্ছা ছিল আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরবর্তী ধাপে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। দুঃখজনকভাবে তার সেই ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। এখন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায় সমগ্র জাতির কাঁধে।’
ভাষণের শেষাংশে তিনি দেশের জনগণকে ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে হবে। এটিই হবে শহিদ ওসমান হাদির প্রতি জাতির প্রকৃত শ্রদ্ধা। আল্লাহ হাফেজ।’





