গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে তুঘলকি কাণ্ড: সরকারি দাম ১২৭০, বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়!

গ্যাসের সিলিন্ডার
গ্যাসের সিলিন্ডার | ছবি: এখন টিভি
0

রাজধানীতে গ্যাস সিলিন্ডারের বাজারে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। সরকারি মূল্য ১ হাজার ২৭০ টাকা হওয়া সত্ত্বেও ভোক্তাদের খুচরা দোকান থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হচ্ছে। দোকানি দোষারোপ করছেন ডিলারদের, আর ডিলাররা অভিযোগ করছেন দোকানিদের দিকে। এ দোষারোপের খেলায় সাধারণ ক্রেতারা পুরোপুরি নাকাল। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে কড়াকড়ি আর পরিবেশকদের লাগাম টেনে ধরলেই থামানো যাবে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।

একটি ১২ লিটারের গ্যাসের বোতলের দাম কত, জিজ্ঞেস করতেই অপ্রস্তুত বিক্রেতা। তাইতো কয়েকবার বললেন ভিন্ন ভিন্ন দাম।

প্রকৃতপক্ষে ১২ লিটারের এক বোতলের গ্যাসের দাম সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ২৭০ টাকা। কিন্তু কত টাকা করে বিক্রি করছে দোকানিরা? ক্রেতা সেজে জানতে চাই তাদের কাছে। দোকানিরা জানান, সরকারি রেটে তারা বিক্রি করতে পারবে না।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার শামসুন্নাহার বেগমের বাড়িতে নেই গ্যাস সংযোগ। নির্ভর করতে হয় এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর। চার সদস্যের ছোট্ট পরিবারের জন্য মাসে ন্যূনতম দু’টি সিলিন্ডার প্রয়োজন হয় তার। খরচ বাঁচাতে হালকা আঁচে রান্না করেন তিনি।

শামসুন্নাহার বেগম জানান, স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দাম নেয় দোকানিরা। এতে ভোগান্তি বাড়ে তাদের।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা দীপান্ত রায়হানের গল্পও একই রকম। পরিবার ছাড়া মগবাজার রেলগেটের একটি ছোট কামরায় থাকেন তিনি। সিলিন্ডারের বাড়তি মূল্যের অভিযোগ তারও।

দীপান্ত রায়হান বলেন, ‘দেখা যায় সরকার হয়তো নাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তখন আমাদের কিনতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে ওরা আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা নিয়ে নেয়। যখনই গ্যাসের দাম কমেছে বলে কোনো সংবাদ পরিবেশন করা হয়, এটার সুবিধা আসলে আমরা সেভাবে পাই না।’

শামসুন্নাহার বা রায়হানই নন, নগরীর অলিগলি ঘুরে দেখা গেল, সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করা বিভিন্ন খাবারের দোকানে একই অভিযোগ। সরকারি নির্ধারিত দাম মানছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন:

রেগুলেটরি কমিশনের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, ১২ কেজি এলপিজি ১ হাজার ২৭০ টাকা, ৩৫ কেজি ৩ হাজার ৭০৫ টাকা এবং ৪৫ কেজি ৪ হাজার ৭৬৪ টাকা। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০, ১ হাজার ৫০০ কিংবা ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ৩৫ এবং ৪৫ কেজি বোতলের ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না সরকারি নির্ধারিত দাম।

খুচরা দোকানিরা কেন বাড়তি দাম নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নে অনেকেই সার্ভিস চার্জের দোহাই দিচ্ছেন। অনেকেই আবার দোষ চাপাচ্ছেন ডিলারদের কাঁধে।

অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে আমরা কয়েকজন ডিলারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু কেউ-ই দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে রাজি নন।

যদিও কিছুক্ষণ পরে দেখা যায়, দোকান বন্ধ করে চলে গেছেন ডিলার। অবশ্য নির্ধারিত দামেই সিলিন্ডার বিক্রির দাবি কোনো কোনো ডিলারের। তারা পাল্টা দায় চাপালেন খুচরা দোকানিদের ওপর।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন-ক্যাবের সভাপতির মতে, গ্যাসের দাম নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তদারকির যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে। পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটর ও ডিলারদের গাফিলতির কারণেই সিলিন্ডারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতির সভাপতি এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের মধ্য কো-অর্ডিনেশনের যথেষ্ট অভাব আছে। এনারজি রেগুলেটরি কমিশন, জ্বালানী মন্ত্রণালয় এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তর যারা ওই কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দিয়েছে, সেটি তাদের রেগুলেটরি ক্ষমতা দিয়ে তাদেরকে বাধ্য করতে হবে। এখান থেকে বাড়তি যে দামটা নিচ্ছে, সেটা শুধু ভোক্তা অধিকারের অভিযানে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে।’

এ বিষয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।

এসএইচ