বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের প্রয়াণ

বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর
বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর | ছবি: সংগৃহীত
0

লেখক, গবেষক ও বামধারার অন্যতম বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর আর নেই। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে আজ (রোববার, ৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে জন্ম নেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি ছিলেন বামপন্থি রাজনীতিবিদ, তাত্ত্বিক, লেখক ও গবেষক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন উমর। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। তবে ১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন।

ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা বদরুদ্দীন উমর ছিলেন সুদক্ষ গবেষক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (তিন খণ্ড), সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক।

২০২৫ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

বদরুদ্দীন উমর জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বামধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের বামপন্থি আন্দোলন, সাহিত্য ও গবেষণা জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এসএইচ