দেশে ভালো খারাপ যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে তার দায় নির্বাচন কমিশনের। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আছে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিধান। এখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন। তবে সংবিধানের ৪৮ এর ৩ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির নিয়োগদানের ক্ষমতা সংকুচিত আছে। যেখানে বলা হয়েছে, দুটি জায়গা বাদে রাষ্ট্রপতি তার সকল দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী পালন করবেন।
আলংকারিক রাষ্ট্রপতির পদ আর প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া একক ক্ষমতার কারণে স্বাধীনতার পর থেকে বিশেষ করে গেল স্বৈরাচার আমলে কী করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে আলোচনার ব্যাপক চর্চিত, তখন থেকে উত্তরণের কথা বলে, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব করে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
এতে বলা হয়েছে, যখন আইনসভা থাকবে তখন এই কাউন্সিল হবে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যের সমন্বয়ে, থাকবেন রাষ্টপতি ও প্রধান বিচারপতি। কমিশন দাবি করে, এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানগণসহ আইন দ্বারা নির্ধারিত পদগুলোর নিয়োগ হলে প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিনের আলোচনার জন্য ৩টি বিষয় নির্ধারিত থাকলেও মূলত গুরুত্ব পায় এনসিসি গঠনের এই বিষয়টিই। প্রায় ৬ ঘণ্টা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনায় এর পক্ষে মত দেয় জামায়াত এনসিপিসহ অধিকাংশ দল। তাদের যুক্তি, এটি মৌলিক সংস্কারের একটি এবং এর মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিগত ফ্যাস্টিট আমলে যেভাবে নিয়োগ হতো, যে আইনে নিয়োগ হতো সেভাবেই নিয়োগ হবে। আমরা কী বিদ্যমান সিস্টেম রেখে দিবো নাকি পরিবর্তন চাইবো সে বিষয়ে আসলে ঐকমত্যে আসা যায়নি। এছাড়া যারা বিরোধিতা করেছে তাদের কাছ থেকে আমরা বিকল্প প্রস্তাবনা আমরা পায়নি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের বলেন, ‘সব বিষয়ে যেখানে যেখানে কন্ট্রোভার্সি থাকবে সেগুলো নোডসহ গণভোটের জন্য দিয়ে দেওয়া। সেটা আমাদের জনগণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।’
তবে আগের মতই এনসিসি গঠনের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। তাদের যুক্তি এনসিসি গঠন হলে বিভক্ত হবে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা যা অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। বিএনপির সঙ্গে একমত হতে দেখা গেছে সিপিবি, গণফোরমসহ কয়েকটি দলকে।
যদি অথরিটি থাকে, ‘পাওয়ার ফাংশন থাকে কিন্তু অ্যাকাউন্টিবিলিটি থাকে না সেরকম কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে সমর্থন জানাতে পারি না। এনসিসি গঠন হলে বিভক্ত হবে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা যা অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।’
এদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হয়। এই প্রস্তাবেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও দলগুলোর মধ্যে। এসব প্রস্তাব বাদে বৈঠকে আলোচনা যুগিয়েছে বাম নেতাদের সভা বয়কট করে আবার যোগ দেয়া এবং জামায়াতে একদিন বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে আবার বৈঠকে নিয়মিত হওয়া। ঐকমত্য কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এই আলোচনায় আগামী সপ্তাহেও চলবে।