এ গল্প জলের, জীবনের। জলের সঙ্গে শুধু আনন্দ কিংবা বেদনা নয়, জীবনেরও যেন যোগসূত্র রয়েছে।
দেশের সর্ব দক্ষিণের সীমান্ত শহর নাফ নদী তীরবর্তী টেকনাফ জনপদ। সমুদ্র আর নদীর ভাসমান নৌকার মতোই ভেসে চলে এপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা।
শুধু মৎস্য আহরণে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হতো যে সৈকতে, সেখানে জাল ফেলতে না পেরে অর্থনৈতিক ভাটা পড়েছে শাহপরীর দ্বীপের জেলেদের। তাই ভরসার ডিঙি নৌকাও আজ নোঙর করা। তবু কী কারণে সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতাই পৌঁছায় না এ অঞ্চলে- তাও জানেন না অবহেলিত জেলেপাড়ার বাসিন্দারা।
উপকূলীয় এ অঞ্চলের আয়ের আরেক উৎস সুপারি। বড় আকারের জন্য সারাদেশে প্রসিদ্ধ টেকনাফের সুপারির। দাম ভালো পাওয়ায় সুপারি চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। স্থানীয় বাজারে সপ্তাহে লেনদেন প্রায় কোটি টাকা।
এলাকার একমাত্র বিশুদ্ধ পানির থানা কম্পাউন্ডের কূপে আগের মতো জল না থাকলেও ইতিহাসে চাপা পড়া বিষাদ আর বেদনাবিধুর প্রেমের স্মৃতি হয়ে এখনও মানুষের মনে খেলে যায় হিম শীতল অনুভূতি। শতবছর আগে এখানেই পানি নিতে আসতেন রাখাইন জমিদারকণ্যা মাথিন।
চাকরির প্রয়োজনে টেকনাফে আসা বাঙালি পুলিশের অফিসার ধীরাজের সঙ্গে স্থানীয় প্রকৃতিকন্যার প্রণয়ের পরিণতি হলো বিরহে। অমর প্রেমের গল্প ধরে রাখতে পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মাথিনের কূপের পাশে ধীরাজের আবক্ষ মূর্তি- যার স্মৃতি সংরক্ষণেও নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।
মিয়ানমারের ঘরোয়া বিরোধে টেকনাফ বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা। মিয়ানমার থেকে আচার, সুপারি, শুঁটকি, কাঠ আমদানি আর রপ্তানি করা হয় প্লাস্টিকসামগ্রী, সিমেন্ট, তৈরি পোশাক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪০ কোটি রাজস্ব আয় হলেও তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাবে এবার রাজস্ব আয় মাত্র ৪৩ কোটি টাকা। এবন্দরে নির্বিঘ্নে পণ্যবাহী জাহাজ আসার সুযোগ তৈরি হলে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, 'পণ্য যেটা সরকারিভাবে আসলে আমাদের বন্দরে যেটা আসে এখন সেটা হচ্ছে রাজধানী রেঙ্গুন থেকে আসে, সেটা প্রায় তিন থেকে চার দিনের একটা পথ চলার বিষয়। নির্বিঘ্নে যদি পণবাহী জাহাজ এখানে আসার কোনো সুযোগ হয়, অনায়াসে সরকার অনেক রাজস্ব পাবে বলে আমরা মনে করি।'
ভাটিয়ালি গানের ভেতর যে বিরহ মূর্ত হয় তার গভীরে কী কেবল সময়ের স্রোতে ভেসে চলা মানুষের কথাই থাকে?