গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ চরে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লার উপস্থিতিতে সফলভাবে তৈরি করা উড়োজাহাজটি আকাশে উড়িয়েছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল জুলহাসের। ২০১৪ সালে এসএসসি পাসের পর থেকেই শুরু হয় উদ্ভাবনের নেশা। তবে, নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়ালেখা আর এগোয়নি।
২০২১ সালে প্রথমবারের মতো রিমোট কন্ট্রোল প্লেন দেখার পরই স্বপ্ন দেখেন, নিজের হাতে উড়োজাহাজ বানানোর। ইউটিউব, বইপত্র ঘেঁটে ধাপে ধাপে শিখেছেন উড়োজাহাজ তৈরির খুঁটিনাটি। কাঠামো সাজানো আর যন্ত্রাংশ জোগাড়—সবই করেছেন নিজ হাতে। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হয়, নিজের তৈরি উড়োজাহাজে আকাশে ওড়েন জুলহাস।
জুলহাস রহমান বলেন, ‘আমি পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। আমার আরসি প্লেন বানানোর শখ ছিল। সেই প্লেন বানানোর পর আমি সেটা আকাশে উড়িয়েছি। তারপর শখ জাগে নিজে উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়বো। আমার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি চেষ্টা করলে পারবো। সেই বিশ্বাসে আমি দীর্ঘ চারবছর চেষ্টার পর সফল হয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই উড়োজাহাজ তৈরিতে আমি অ্যালুমিনিয়াম, এসএস পাইপ ও লোহার পাইপ ব্যবহার করেছি। ইঞ্জিন হিসেবে ১৩ হাজার টাকার পানির পাম্পের সাতঘোড়া ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি।’
জুলহাস বলেন, ‘চেষ্টা করলে এই উড়োজাহাজকে মেঘের উপর থেকে ঘুরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু যেহেতু এটা ট্রেইনার বিমান তাই ঝুঁকি থেকে যায়। তাই আমি ৫০ ফুট উচ্চতার উপরে উঠাইনি। ভবিষ্যতের এর উপরে এটাকে উঠানো হবে না। যদি এটাকে আরও আপডেট করা হয় তবেই উপরে উঠাবো। সব মিলিয়ে আমার দেড় লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। আমি জীবনে কখনো প্লেনে উঠিনি। অদক্ষ হয়েও আমি সফলভাবে এটা আকাশে উড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এই বিমানকে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে সরকার থেকে আমাকে যেন সহায়তা করে এবং কোনো প্রকার বাঁধা না দেয়।’
তার এ সফলতায় বিস্মিত এলাকাবাসী। কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, গ্রামের এক তরুণ নিজেই উড়োজাহাজ বানিয়ে আকাশে উড়তে পারেন।
জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা বলেন, ‘জুলহাস সাত ভাই বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে আর পড়া হয়নি। পরে, ঢাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ শুরু করে। ও ছোটবেলা থেকেই প্লাস্টিকের জিনিস কাটাকাটি করে কিছু না কিছু বানাতে চাইত।’

তিনি বলেন, ‘গত চার বছর ধরে উড়োজাহাজ বানানোর জন্য জুলহাস আর ওর ছোট ভাই নয়ন খুব চেষ্টা করছিল। আমি ও আমার পরিবারের অন্যান্যরা ওকে অনেক বুঝিয়েছি তুই টাকা নষ্ট করিস না। কিন্তু ও শোনে নাই কারো কথা। কিন্তু অনেক চেষ্টার পর ও সফল হয়েছে আকাশে উড়োজাহাজটি উড়ানোর জন্য। এখন প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। যাতে তার উদ্ভাবন আরও বিকশিত হয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
জুলহাসের এই অসাধারণ কীর্তি শুধু স্থানীয়দেরই নয়, প্রশাসনের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। এমন প্রতিভাকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানান জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা।
তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনে শিবালয় উপজেলার ইউএনওকে জানাই। পরে আজ মঙ্গলবার নিজের চোখে জুলহাসের উড়োজাহাজ উড়ানো দেখলাম। জুলহাসের গবেষণাকাজে সরকার সহযোগিতা করবে। তবে এটি কারিগরি বিষয়। প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করে তাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।’