নতুন প্রাণের চোখের মায়ার মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন এই হাসপাতালের দায়িত্বরত সবাই। তাই আদর করে নাম রেখেছে মুগ্ধ। জন্ম ওর আজন্ম পাপ কি না? সেই প্রশ্ন করার মানুষ কই। কোন এক নরপশু জন্মের পরই মৃত্যু কামনা করে ওকে ফেলে গেছে সাইন বোর্ড এলাকার ময়লার ভাগাড়ে।
শুরু হয় অতিমানবীয় শিশুটির, জীবন যুদ্ধ। মৃত্যুকে চোখ রাঙানি দিয়ে বেঁচে যাওয়া শিশুটির স্থান হয় রাজধানীর মাতুয়াইল শিশু সদন হাসপাতালে।
জীবন যুদ্ধের এমন গল্প শুধু মুগ্ধের নয়। কত শত অতিমানবীয় নবজাতকের যুদ্ধ জয়ের গল্প পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে।
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গত ৬ বছরে ২১০ জন নবজাতককে পরিত্যক্ত ও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। মানবাধিকার সংগঠন সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ১২ মাসে মোট ৯৪ জন নবজাতক উদ্ধার হয়েছে যার ৬৪ জনই মৃত।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের ছয়টি ছোটমণি নিবাসে ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত চার বছরে ১০ হাজার ৮৯৮ জন পরিত্যক্ত শিশু আশ্রয় পায়।
পরিবার পাওয়া এমন একটি শিশুর পূর্বার গল্প করবো আমরা। মায়ের কোলে পূর্বার হাসিতে হাসে পুরো পরিবার। তার নির্দোষ কান্না মায়ের জীবনের অর্থ পূর্ণ করে। শিশুটিকে জীবনে পেয়ে পূর্ণতা পুরো পরিবারে। যেই জন্মদাত্রী মা পূর্বাকে ফেলে গেছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতার সুর এই মায়ের কণ্ঠ ।
তিনি বলেন, ‘আমার আব্বা, আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ঘুম থেকে উঠে ওকে কল দেয়। ওর সাথে দুই তিনবার কথা না হলে একেবারে অস্থির হয়ে যায়। প্রতিদিন আমরা ওর জন্য ঘরে ফিরি। মানুষকে কি বলবো হয়তো খুব অসহায় মুহূর্তে ওকে ফেলে যেতে হইছে। তাই আমি কোনো অভিযোগ করবো না বরঞ্চ তাকে ধন্যবাদ দিবো। তারা ফেলে গিয়েছে বলেই আমি সন্তানের মা হয়েছি।’
অপ্রত্যাশিত এমন প্রাণের আশ্রয়ের ভুমিকায় মাতুয়াইলের মাতৃসদন হাসপাতাল। ৪২ জন নবজাতককে উদ্ধারের গল্প শুনবো এই হাসপাতালের কর্ণধারের কাছ থেকে।
মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক শুধু স্ট্যাটাসের জন্য রাস্তাঘাটে যদি বাচ্চা ফেলে দিতে হয় তারা যেন বাচ্চাকে ডাস্টবিনে, পুকুরে না ফেলে আমাকে কল করে। দেশের যেকোনো স্থানে হোক না কেন, যতটাকা খরচ হোক অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া থেকে শুরু করে সমস্ত দায় দায়িত্ব আমি নিবো।’