কংস নদে কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন ঝুঁকি

0

গেল তিনদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটছে কংস নদের তীরবর্তী হাজারও গ্রামবাসীর। বানের জলে ভাসছে গ্রাম থেকে গ্রাম। তবে উজানে নতুন করে কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয়দের মাঝে।

আকস্মিক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে নেত্রকোনার প্রায় চারটি উপজেলা। এর মধ্যে গতকাল (সোমবার, ৭ অক্টোবর) থেকেই কংস ও সোমেশ্বরী, উব্দাখালী ও মগড়া নদীর পানি কমায় কমছে দুর্গাপুর, পূর্বধলায়, কলমাকান্দা সদরের পানিবন্দির সংখ্যা। এখন পর্যন্ত এই এলাকাগুলোতে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

পূর্বধলা উপজেলার কংস নদের তীরবর্তী জারিয়া ইউনিয়নের নাটেরকোনা বেরিবাঁধ রক্ষায় গত রোববার (রোববার, ৬ অক্টোবর) স্থানীয়রা স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বালুর বস্তা ও মাটি ফেলে চেষ্টা করলেও এই দিন সন্ধ্যার পরে বাঁধের দু'টি অংশে ভেঙে যায়। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি যায় কৃষি জমি থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকায়।

আজ (মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর) সকাল থেকে কংস নদীর পানি কমতে থাকবে বাঁধে ভাঙ্গা অংশ দিয়েও পানি আসা কমছে। তবে পানি কমতে থাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন ঝুঁকি। বাঁধের আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ইতিমধ্যে ভাঙন ঝুঁকিতে দিন পার করছে। বাসিন্দারা বাঁশ কাঠ দিয়ে কোনোরকমে নিজেদের শেষ সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা করলেও তাও অপ্রত্যাশিত।

এদিকে ভাঙন কবলিত বাঁধকে মেরামতে এখন পর্যন্ত তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার ফলে গেল তিনদিন ধরে পানি যাচ্ছে ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে। তবে ইতিমধ্যে ভাঙনীতে এই এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রশাসন বলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বাঁধটিকে সংস্কার করে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হবে।

স্থানীয়রা বলছেন গত তিন বছর ধরে এই বাঁধে নতুন করে মাটি না ফালায় এবারের বন্যায় বাড়তি ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ তাদের। তারা বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও তেমন কোনো কর্ণপাত করেননি। যার ফলে আকস্মিক এই বন্যায় শত চেষ্টার পরও ভাগটিকে রক্ষা করা যায়নি।

স্থানীয়রা আরও বলছেন এর আগেও ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই বাঁধের কয়েকটি অংশে ভেঙে প্লাবিত হয় পূর্বধলা উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম। তখন থেকেই স্থানীয়রা এই বাঁধটিকে আরো মজবুত ও স্থায়ী করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তা না হয় দশ বছর পর পুনরায় তার মাশুল গুণতে হচ্ছে।

এদিকে সোমেশ্বরী তীরবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার গাওকান্দিয়া, কাকৈরগড়া, বাকলজোড়া ও চন্ডিগড় ইউনিয়ন থেকেও পানি কমতে শুরু করেছে। সোমেশ্বরী পাহাড়ি ঢলে এই এলাকাগুলোতে কৃষি, মৎস্য সহ গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নাটেরকোনা গ্রামের বাসিন্দা শামসুন্নাহার জানান, এই বাঁধের পাশেই আমার অটোচালক স্বামীর একমাত্র বসতভিটা। আমরা গেলো তিনদিন ধরে না ঘুমিয়ে কোনোরকমে এই বাড়ি থেকে রক্ষায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু বন্যার পানিতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গাছপালা ও বাড়ির পেছনে অংশ ভেঙে নিয়েছে এখন পুরো বাড়ি আমার চোখের মধ্যে রয়েছে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, আমরা ইতিমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পূর্বধলা নাটেরকোনা বেরিবাঁধের অংশটিও আমরা দেখে এসেছি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়টিকে সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে ভাঙন কবলিত স্থানটিতে এখনও পানি তীব্র স্রোত রয়েছে স্রোত না কমা পর্যন্ত এখানে সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। এছাড়াও চারটি উপজেলায় বন্যার ক্ষতি নির্ণয় যেন আমরা তিনটি কমিটি গঠন করেছি এই কমিটির মাধ্যমেই মনিটরিং করে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করা হবে।

এসএস