সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে আবারও কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। ডিসেম্বরে কিছুটা কমার পর নতুন বছরের শুরুতেই ফের গরুর মাংসের দাম বাড়ায় হতাশ ক্রেতারা।
গত সেপ্টম্বরে গরুর মাংসের কেজি যখন ৮০০ টাকা, তখন ওজনে কম দেয়ার অভিযোগে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় বাজারে। এরপর সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে কমে আসে মাংসের দাম। এমনকি গত মাসেও রাজধানীর মাংসের দোকানগুলোতে টাঙানো ছিল মূল্য হ্রাসের সাইনবোর্ড। বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল মাংসের দোকানগুলোতে। তবে জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচনের পর পাল্টে গেছে সেই চিত্র।
নগরীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় মানভেদে গরুর মাংস কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। মূল্য হ্রাসের পর ফের দাম বাড়ায় আক্ষেপ ক্রেতাদের।
তাদের একজন জানান, '৬০০ টাকা করে নিছে আগে। এখন ১০০ টাকা বেশি। আসলে আমরা গরিব মানুষ, এখন বাজার পণ্যের দাম যেভাবে বাড়তেছে, আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।'
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে দাম, কমেছে ক্রেতা, প্রভাব পড়েছে বাজারে। খুচরা মাংস ব্যবসায়ী জানান, 'আগে যে বাজারটা ছিল, একটু কম ছিল। ৬৫০ টাকা বা ৬০০ টাকা আমরা বিক্রি করেছি। আমাদের পোষায় নাই। এখন যে আমরা ৭০০ টাকা বিক্রি করতেছি, গরুর বাজার হয়ে গেছে অনেক চড়া। এক একটা গরুতে বিশ পঁচিশ হাজার টাকা বাড়তি।'
আরেক ব্যবসায়ী জানান, এখন গরুর আমদানি অনেক কম।
আর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জানান, কোরবানির জন্য মজুত বাড়াতে গরু বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন খামারিরা।
এদিকে এ অবস্থার জন্য মাংস ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন। আর গো খাদ্যের দাম গত দুই মাস ধরে অপরিবর্তিত আছে বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, 'এই মুহূর্তে নতুন কোন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে নাই যার কারণে গরুর মাংসের দাম বাড়তে পারে। গরুর ব্যাপারী কিংবা মাংস ব্যবসায়ীদের কারসাজি হতে পারে। মধ্যসত্ত্বভোগীদের একটা কারসাজি আছে আমি নিশ্চিত।'
মাংস ব্যবসায়ী এবং খামারিদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বাজার তদারকির ঘাটতিকেও দায়ী করেছেন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান। বলেন, 'গরুর মাংসের যারা ব্যবসা করে তাদের ধারণা হয়ে গেছে যে, সব জিনিসের দাম যখন বাড়ছে, তখন আমরা যদি দাম বাড়াই তাহলে আরও বেশি লাভ করতে পারবো। তাই ওরা ক্রমান্বয়ে মূল্য বৃদ্ধি করছে।'
ব্যবসায়ীদের ওপর ছেড়ে দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা অন্য কোন কারণে সাপ্লাই চেইন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
একদিকে গরুর মাংসের বাজারে অস্থিরতা আর অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের দায় এড়ানোর কারণে বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ের প্রতিটি ধাপে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি কেবলমাত্র গরুর মাংসের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে পারে বলে মন্তব্য ক্রেতাদের।