প্রতিটি দেশের মানুষের রয়েছে আলাদা ও বিশেষ খাদ্যাভাস। এই যেমন আমরা মাছে-ভাতে বাঙালী। কোথাও আবার রুটির প্রাধান্য। ঠিক তেমনি আর্জেন্টাইনদের পছন্দ গরুর মাংস। উৎসব তো বটেই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতেও গুরুত্ব পায় আমিষে জাতীয় এই খাবারটি।
তবে বিশ্বব্যাপী চলা মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে আর্জেন্টাইনদের খাদ্য তালিকায়। মূল্যস্ফীতির কারণে গরুর মাংসের দাম অনেকটাই নাগালের বাইরে। তাই পছন্দ হলেও গরুর মাংস কিনছেন না দেশটির অনেক নাগরিক। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় চলতি বছর গরুর মাংসের বেচাকেনা কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
আর্জেন্টাইন নাগরিক ক্লডিয়া স্যান মার্টিন বলেন, 'মূল্যস্ফীতির কারণে আর্জেন্টাইনরা যে কোনো পণ্য কেনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস, তবে সেটা অবশ্যই মাংস নয়। আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মাংস ছাড়া বিকল্প কিছু ভাবতেই পারি না। আমাদের রেফ্রিজারেটরে অন্তত এক টুকরো হলেও মাংস থাকা চাই।’
দৈনিক খাদ্যাভাস থেকে হঠাৎ করে পাস্তা খাওয়া বাদ দেয়া একজন ইতালিয়ানের পক্ষে যতটা কঠিন, আর্জেন্টাইনদের জন্য মাংস খাওয়া বাদ দেয়া ঠিক ততটাই কঠিন। তাই মাংস খেতে আর্জেন্টাইনরা এখন মাংসের দোকানগুলোর মূল্যছাড়ের অপেক্ষায় থাকেন।
মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটিতে দারিদ্র্যতার হার দিন দিন বাড়ছে। গৃহহীন হওয়ার পাশাপাশি অনেক পরিবার মাংস, দুধ ও শাকসবজি সহ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ অনেক খাবার গ্রহন কমিয়ে দিয়েছে।
বছরের প্রথম তিন মাসে বেশ ভালো পরিমাণে মাংস রপ্তানি করেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু তারপরও এ খাতের রপ্তানি কঠিন সময় পার করছে বলে জানিয়েছেন বুয়েনস আইরেসের মাংস চেম্বারের সভাপতি মিগুয়েল স্কিয়ারিটি। তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম অবস্থা দেশটির মাংস রপ্তানি খাতের।'
আর্জেন্টিনার স্থানীয় মাংস চেম্বারের সভাপতি বলেন, 'আর্জেন্টিনার বর্তমান পরিস্থিতি বেশ নাজুক। ভোক্তারা তাদের সামর্থের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। তাই বেচাকেনা কমেছে অনেক। গরুর মাংসের দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তারা মুরগি ও শূকরের মাংস কিনতে বেশি আগ্রহী।'
আর্জেন্টিনায় বর্তমানে গরুর মাংসের কিলো প্রতি দাম স্থানীয় মুদ্রায় সাড়ে ৫ হাজার পেসো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০০ টাকা। যেখানে মুরগি মাংস কিলো প্রতি ২ হাজার পেসো আর শূকরের মাংস প্রতি কিলো দাম ৩ থেকে ৪ হাজার পেসো।