শ্যামবাজার, রাজধানী ঢাকার অন্যতম পুরাতন বাজার। ব্রিটিশ আমল থেকে ঢাকাবাসীর বিভিন্ন পণ্যের যোগান মিলে এ বাজারে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, রসুনের পাইকারি বাজার এটি। আরত বা মোকামগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই পণ্য বেচাকেনা চলতে থাকে। ট্রাকে ট্রাকে আসতে থাকে বিভিন্ন মসলা।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে দেখা যায় ভিন্ন এক চিত্র। হাতে গোনা কিছু ট্রাক থেকে পেঁয়াজের বস্তা নামানো হয়। বেশিরভাগ আড়তগুলোতেই পেঁয়াজ নেই। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত, এমন খবর গণমাধ্যমে আসতে না আসতেই বাজারে একদিকে যেমন বেড়েছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম, অন্যদিকে পেঁয়াজের আড়তগুলোও প্রায় ফাঁকা।
বিক্রেতারা বলেন, গতকাল থেকে দেশি পেঁয়াজ ২০০, বিদেশি ১৫০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে আর ভারতের পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম কমে যাবে। এছাড়া দাম কমবে না।
এ তো গেলো পাইকারি আড়তের কথা, রাজধানীর অন্যতম বড় বাজার কারওয়ানবাজারের দৃশ্যও প্রায় একই রকম। প্রতিরাতে যেখানে কয়েক কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয়, সেই বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা। শুক্রবার দুপুরেও যা বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি।
পাইকাররা বালেন, আগে ইমপোর্ট এর মাধ্যমে আসা পেঁয়াজ বিক্রি করতাম, খরচ কম পড়ত, অল্প দামে বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন বর্ডার থেকে আমাদের কিনে আনতে হয় সেজন্য দাম বেশি।
১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। এবং চায়না, পাকিস্তানি আর টার্কিশ পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। আমদানি না করা গেলে এই পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে শঙ্কা বিক্রেতাদের।
ব্যাবসায়ীরা জানান, ভারতের পেঁয়াজ দিয়ে সারা বাংলাদেশ চলে, সেখানে ভারতের পেঁয়াজ বন্ধ থাকলে দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
যেসব ক্রেতা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন তাদের অনেকেই দাম দেখে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনছেন।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুত থাকা পেঁয়াজ রয়েছে, সরকারকে তার সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, 'দাম কমাতে প্রথম যে কাজ করতে হবে তা হল, যেগুলো মজুত করা আছে তা বাজারে আমদানি দামে ছেড়ে দেয়া। আমাদের দেশি পেঁয়াজ বাজারে এসেছে এগুলো যেন সঠিকভাবে সরবারহ করা হয় সেদিকে সরকারের নজর রাখতে হবে।'
৮ ডিসেম্বর, ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড-ডিজিএফটি থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে, তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অনুরোধের পর কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেয়া অনুমতির ভিত্তিতে।