বাজার
0

আকাশছোঁয়া শাক সবজির দামে দিশেহারা ক্রেতা

চট্টগ্রাম

এক আঁটি লাল শাক ৫০ টাকা, এক কেজি শিম ৩২০। নতুন আসা শীতের সবজিও ২০০ টাকা আর ৭০-৮০ টাকার নিচে নেই কোন সবজি। এমন আকাশছোঁয়া শাক সবজির দামে দিশেহারা চট্টগ্রামের ক্রেতারা। সাহস করে এক কেজি সবজি কিনতে না পেরে এক পোয়া বা আধাকেজি কিনে ফিরছেন অনেকে। এক মাসের ব্যবধানে এমন দ্বিগুণ দাম বাড়ার পেছনে সরকারের নজরদারির ব্যর্থতাকে দুষছেন ক্রেতা বিক্রেতারা।

কীভাবে সবজি খাবো? বাজারে আসা সব ক্রেতার মুখে একই প্রশ্ন। দাম এতোটাই বেড়েছে যে, বিক্রেতারা এখন আর কেজিতে দর বলছেন না। ক্রেতারা দাম করছেন আড়াইশ' গ্রাম সবজির।

যেমন ধরুন এক আঁটি লাল শাক বা কুমড়ো শাক কিনতে গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা। অথচ আঁটিতে লাল শাক আছে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫টি আর কুমড়ো শাক ১৫-২০ টি।

বাজারে দামের দিক থেকে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে নতুন আসা শিম। এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটোর দাম ২০০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে সব সবজিরই দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ৫০ টাকা কেজির বেগুন এখন ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩৬০ টাকা। সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হওয়া পটল, লতি, পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়।

ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘প্রতিটা সবজির দাম অতিরিক্ত। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে।’

বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘ডাবল দাম হয়ে গিয়েছে সব কিছুর তাই এখন ক্রেতাদের কাছে আধা কেজির দাম বলছি।’

বাজারে আসা নিম্ন আর মধ্যবিত্তের এক কেজি সবজি কেনার সাহস নেই। উপায় না দেখে কেনাকাটা কাটছাঁট করছেন ক্রেতা। কমছে থলের ওজন, খাওয়া দাওয়া কিংবা পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণও। বাজার থেকে আধা কেজি বা এক পোয়া সবজি কিনে ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার না কিনেই ফিরছেন শূন্য হাতে।

ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘আমাদের লাগবে দুই কেজি নিতে হচ্ছে ১ কেজি।’

আরেকজন বলেন, ‘আর কিছু দিন চলতে থাকলে আমাদের কেজিতে না কিনে পিছ হিসেবে কিনতে হবে।’

দামে সস্তার কারণে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের খাবার তালিকায় থাকে ডিম। তবে কারসাজিতে গত এক মাসে ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি পিস। পুষ্টির হিসাবে, একজন মানুষের বছরে ডিমের চাহিদা ১০৪টি, যেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৩৫টি। একটু পেছনের তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ সালে ডিম উৎপাদন হয়েছিলো ১ হাজার ৫৫২ কোটি পিস। অর্থাৎ ৫ বছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। কিন্তু, দফায় দফায় দাম বাড়ছে কেন? তার কোন সদুত্তর নেই কারো কাছে। তাহলে সরকারি হিসাবে গরমিল? নাকি প্রশাসনের তদারকির অভাব জানা নেই কারও।

ডিম বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘বড় বড় আড়তদারদের ধরতে হবে ওদের কাছে সব। তারা লাখ লাখ পিসি ডিম কেনা-বেচা করে। আমরা তো খুচরা বিক্রি করি আমাদের কাছে এসে তো লাভ নেই।’

বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, বন্যার কারণে ডিম বা সবজির সরবরাহ কম, তবে বাজার ঘুরে সে চিত্র চোখে পড়েনি? কোন কোন দোকানির মতে, কারসাজি করেই হঠাৎ নাগালের বাইরে নেয়া হয়েছে সবজির দাম।

নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকের আশা ছিল বাজারে দ্রব্যম্যূলের নাগাল টানা হবে। প্রথম কিছুদিন ছাত্র ও প্রশাসনের তদারকিতে কিছু দাম কমলেও আবারও তা বাড়তে শুর করেছে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর