জীবনযাপন
0

ফেলে আসা ঈদের স্মৃতি

ঈদের এলেই অনেকের মন চলে যায় অতীতে। ছেলেবেলায় কাটানো ঈদগুলো নিয়ে ভাবতেও আমাদের আনন্দ লাগে। বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের ঈদের আনন্দও পানসে হয়ে ওঠে। তবে মন ঠিকই কড়া নাড়ে স্মৃতির দরজায়।

সময় বয়ে যায়, নতুন বছর আসে, আসে খুশির ঈদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদ-উল-ফিতর অন্যতম বিশেষ উৎসব। প্রতি বছর সারা বিশ্বে জাঁকজমকের সাথে পালিত হয় ঈদুল ফিতর। রমজানের এক মাসব্যাপী উপবাসের সমাপ্তি ঘটে ঈদ-উল-ফিতরে। রমজানের শেষ থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত নানা উত্তেজনা আর পরিকল্পনায় ভরপুর থাকতো শিশুমন।

বয়সের সাথে সাথে ঈদ আনন্দ যতই বদলে যাক না কেন, ঈদের কিছু স্মৃতি আজো আমাদেরকে আনন্দ দেয়।

১. ঈদকার্ড

প্রিয়জনদের ঈদকার্ড বিতরণ ছোটবেলার ঈদের মধুর এক স্মৃতি। পাড়ার অলিগলিতে অস্থায়ী ঈদ কার্ডের দোকানের পসরা বসতো একসময়। বন্ধুদের ঈদকার্ড পাঠিয়ে চমকে দেয়ার মজাই ছিল আলাদা। অনেকে আবার নিজ হাতেও কার্ড বানাতেন। কার্ডে লেখা থাকতো নানা শুভেচ্ছাবার্তা কিংবা আবেগঘন লেখা।

২. ঈদের চাঁদ দেখা

ঈদের আনন্দের মধ্যে অন্যতম আনন্দ ছিল চাঁদ দেখা। বিশেষত উনত্রিশ রোজায় শিশু-কিশোররা তীর্থের কাকের মতো আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতো, কখন দেখা দেবে শুভ্র সরু সুতোর মতো বাঁকা একফালি চাঁদ। নতুন চাঁদ দেখার পর যে আনন্দ উল্লাস হতো সেটা মনে হলেই এখনও আশ্চর্য লাগে। নতুন চাঁদ দেখে তা পরিবারের সবাইকে জানানো, টিভি পর্দায় ভেসে আসা নজরুলের চিরসবুজ ঈদের গান। প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল ঈদ আনন্দ।

৩. ঈদের প্রস্তুতি

রাত জেগে থেকে ঈদের অপেক্ষা, নতুন পোশাক লুকিয়ে রাখা, চাঁদরাতে পটকা ফোটানো বা মেহেদী লাগানো, ঈদের রাতে ভাইবোনের বিশাল বাহিনী নিয়ে গল্পের আসর বসানো, ঈদে মজার খাবারের আয়োজন... মনে পড়লে আজো ঠোঁটের কোণে ভেসে ওঠে এক চিলতে হাসি।

৪. ঈদের সালামী

শিশু-কিশোরদের ঈদুল ফিতরের অন্যতম আনন্দ ঈদ সালামি। প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে বড়দের থেকে নতুন নোটে সালামির বিকল্প হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেনে ঈদ সালামি পাওয়া। যেমনটা দেখা যায়, ঈদ কার্ডের পরিবর্তে ম্যাসেজে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ক্ষেত্রে। এরকম নানা বিকল্পে ঈদ আনন্দ রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। নতুন নোটে ঈদ সালামি পাওয়ার আনন্দ, কে কত বেশি সালামি পেল, ফেলে আসা শৈশবের ঈদ আনন্দ এখন স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়।

৫. ঈদ যাত্রা

প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শত বাঁধা পেরিয়ে ছুটছে মানুষ। এখন যারা বয়সে যুবক বা প্রৌঢ় তারা একটা সময় অপেক্ষা করতেন এই ঈদযাত্রার। দাদা কিংবা নানাবাড়িতে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকেই। অপেক্ষায় থাকা হতো স্কুল ছুটির। এখনো ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে তবে একটা সময় যৌথ পরিবারের প্রাধান্য থাকায় ঈদ ছিল আরো রঙিন ও বর্ণিল। যৌথ পরিবারের ঈদ আনন্দ ভেঙে এখন একক পরিবারে চলে ঈদের আয়োজন। অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। দিন দিন যৌথ পরিবার হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে আনন্দের ব্যাপকতা।