দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বরাবরাই অভিযোগ ছিলো বিচার বিভাগ সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ীই পরিচালিত হয়। ১৯৯৫ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে সেসময়ে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা একটি মামলা করেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হলো।
বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গত (রোববার, ৩ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, একটি সম্পূর্ণ পৃথক সচিবালয় এখন থেকে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এ সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান বিচারপতির হাতে। এ অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগর সব কিছুই পরিচালিত হবে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের মাধ্যমে।
এ অধ্যাদেশ জারি হওয়াকে বিচার বিভাগের জন্য মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, ঐতিহাসিক এ অধ্যাদেশ জারির ফলে নিম্ন আদালত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে।
আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, ‘এ অধ্যাদেশের ফলে সুফল ভোগ করবে যারা বিচার কাজে জড়িত তারা নিজেদের স্বাধীন ভাবতে শুরু করবে। তাদের আর হয়রানিমূলক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।’
আরও পড়ুন:
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে চান তাহলে বিচার বিভাগের সঙ্গে জড়িত বিচারক, আইনজীবী, কর্মকর্তা, সরকার সকলে এটিকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দিবেন।’
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলছেন, দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি সোনালি সংযোজন। তিনি প্রত্যাশা করেন, অতীতে বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছেন, এরকম কোনো বিচারক আর বিচার বিভাগে আসবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের দিক থেকে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন করার ব্যাপারে যতটুকু করার দরকার ছিলো করা হয়েছে। পুরো দায়িত্ব চলে গেছে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে।’
অন্যদিকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ মামলার বাদী ও সাবেক বিচারক মাসদার হোসেন বলছেন, এমন পদক্ষেপে সন্তুষ্ট তিনি।
সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন বলেন, ৫৪ বছরে এটি কেন হলো না। এ আর্টিকেল কেন সংযোজন হলো না। সুধীজন, পলিটিক্যাল যারা আছেন তারা কেন এটি নিয়ে ভাবলেন না। কেন একটি পেশাজীবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হলো। প্রথমেই সরকারকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমাদের জুডিশিয়াল সেপারেশন হয়েছে যদিও পরিপূর্ণ নয়।’
চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দায়িত্ব নেয়ার পর বিচার বিভাগের সংস্কার ও উন্নয়নে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন। যার মধ্যে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করার কথা উল্লেখযোগ্য।





