চিকিৎসা বিজ্ঞানের বহুল প্রচলিত একটি উক্তি হলো - প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। আর এটিই করে দেখাচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের 'ওলবিটো ডো প্ল্যান্ট' নামে একটি বায়ো কোম্পানি। বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রজনন ঘটানো হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াবাহী বিশেষ এক ধরনের মশার, যা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সক্ষম।
প্লান্ট থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহের পর বিজ্ঞানীরা এটিকে ধাপে ধাপে বড় করে তোলেন । লাভা ও কিউবা পর্যায় থেকে পরিণত হতে পাঁচ থেকে ছয় দিন লাগে মশাগুলোর। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিকল্পনা মাফিক সম্পাদন করে বিজ্ঞানীরা।
ওলবিটো ডো ব্রাজিল প্ল্যান্টের উৎপাদন সমন্বয় বিভাগের মারলিন সালাজার বলেন, ‘মশাগুলো যখন লার্ভা অবস্থায় থাকে, তখন সেগুলোকে খাবার দেই। এরপর এগুলো যখন পিউপা ধাপে পৌঁছায় তখন লিঙ্গভেদে আমরা নারী ও পুরুষ মশাগুলোকে আলাদা করি। এরপর এগুলোকে খাঁচায় রাখি এবং খাবার দিতে থাকি। একপর্যায়ে এগুলো পরিণত পর্যায়ে পৌঁছালে রাস্তায় ছেড়ে দেই।’
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কীটতত্ত্ববিদ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সঙ্গে যৌথ তত্ত্বাবধানে কাজ করে কোম্পানিটি। ব্রাজিলের যেসকল এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট সাধারণত সেসব এলাকায় পাঠানো হয় ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়াবাহী মশাগুলো। এরপর সাধারণ মশাগুলোর সঙ্গে প্রজননের মাধ্যমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাসবাহী রোগ প্রতিরোধ করে এটি।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুজ্বরের কবল থেকে ব্রাজিলবাসীকে বাঁচাতে সামনের দিনগুলোতে উৎপাদন বাড়াতে চায় কোম্পানিটির সিইও।
ওলবিটো ডো ব্রাজিল প্ল্যান্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিয়ানো মোরেরা বলেন, ‘আমরা সপ্তাহে ১০০ মিলিয়ন ওলবাকিয়া মশার ডিম্বাণু উৎপাদন করতে চাই। যাতে প্রতি ছয় মাসে দেশের অন্তত ৭০ লাখ মানুষকে আমরা ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে পারি।’
বিশেষ এ মশার প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা থাকলেও, এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয় বলে দাবি করেছেন ওলবিটো ডো ব্রাজিল প্ল্যান্টের উৎপাদন বিভাগের এক কর্মকর্তা।
ওলবিটো ডো ব্রাজিল প্ল্যান্টের প্রোডাকশন ম্যানেজার এ্যান্তোনিও ব্রানডাও বলেন, ‘ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া শুধু মশার শরীরে থাকে। মশা মারা গেলে এটিও মারা যায়। আর আমাদের পুরো কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়াও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এর ডিম্বাণু উৎপাদন করে সফল হয়েছে।’
অন্যান্য দেশের মতো ব্রাজিলেও প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় রয়েছে ডেঙ্গু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশটিতে গেল বছর রোগটিতে প্রাণ হারান ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ।





