দীর্ঘ দেড়শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী দেশটিতে জন্মগ্রহণকারী যে কেউই মার্কিন নাগরিক। সংশোধনীর ভাষায়, কোনো দেশের কূটনৈতিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যের সন্তান ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যে কেউই দেশটির নাগরিক।
গেল জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই যুক্তরাষ্ট্রের বহুবছরের এ সাংবিধানিক অধিকার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করে, একটি নির্বাহী আদেশে সইও করেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন দ্রুত দেশব্যাপী ভুলভাবে জারি করা অসংখ্য নীতিমালা বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারি। এর মধ্যে একটি জন্মগত নাগরিকত্ব, যা দাসদের শিশুদের জন্য ছিল। এমন কিছু লোক আছে যারা সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে এ দেশে ছুটি কাটাতে এসে সন্তান জন্ম দেয়। লাখ লাখ মানুষ জন্মগত নাগরিকত্বের অধীনে এ দেশে প্রবেশ করছে।’
ট্রাম্পের সেই নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী কিংবা পর্যটন ভিসায় দেশটিতে গিয়ে কেউ যদি সন্তান জন্ম দেয় তাহলে সে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। নিম্ন আদালতে একাধিকবার এটি খারিজ হয়েছে। অনেক বিচারক, এ আদেশকে সংবিধানের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ট্রাম্প। এবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন:
তবে কোর্টের শুনানি শুরুর তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। আদালতের রায়ের ঘোষণা আসতে কয়েকমাস সময় লেগে যেতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্ত যাইহোক না কেন, ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকে।
জন্মগত নাগরিকত্বের নিয়ম বাতিলের চেষ্টার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ তালিকার নিষিদ্ধ দেশের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। চলতি বছরের জুন মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ১২টি দেশের ওপর পুরোপুরি এবং সাতটি দেশের জন্য আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। এবার সেই সংখ্যা ৩০ ছাড়াতে যাচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজের দ্যা ইনগ্রাহাম অ্যাঙ্গেল টক শো-তে প্রেসিডেন্টের এমন পরিকল্পনার কথা জানান, দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নয়েম।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নয়েম বলেন, ‘আমি সংখ্যাটি নির্দিষ্ট করে বলব না। কিন্তু এটি ৩০টির বেশি হবে। কোন কোন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে সে ব্যাপারে ভাবছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। স্থিতিশীল সরকারবিহীন কোনো দেশের নাগরিক কেমন তা জানার কোনো উপায় নেই। সেসব দেশের নাগরিকদের আমাদের দেশে প্রবেশের অনুমোদন কেন দেব?’
তবে অনেক মার্কিন আইনজীবীর মত, দেশটিতে বহু বছর ধরে চলা এ আইনটি কোনো প্রেসিডেন্টই বাতিল করতে পারবেন না। এখন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা।





