মামদানির উত্থানে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত

জোহরান মামদানি
জোহরান মামদানি | ছবি: সংগৃহীত
0

মার্কিন রাজনীতিতে জোহরান মামদানির উত্থানে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুদূর ভারত। বলা যায়, মুসলিম মামদানি দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছেন মোদি সমর্থকদের কপালেও। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠোঁটকাটা এ ডেমোক্র্যাট নেতার স্পষ্টবাদিতায় ক্ষুব্ধ ভারতীয়রা। ভোটের দিন পর্যন্ত উগান্ডায় জন্ম বলে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার দাবিসহ নানা বিদ্বেষমূলক বাধা পেরিয়ে জিতেছেন মামদানি।

গেলো ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়োরাল প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে নতুন চমক হিসেবে মার্কিন রাজনীতির ময়দানে উত্থান শুরু জোহরান মামদানির। প্রচারণার শুরু থেকেই তীব্র বিদ্বেষ পাশ কাটিয়ে নিশ্চিত করলেন চূড়ান্ত জয়।

নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র, বাবার সূত্রে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ও উগান্ডান-মার্কিন দ্বৈত নাগরিক মামদানি। বিশ্বনেতৃত্বে থাকা দেশের রাজনীতিতে তিনি পথিকৃৎ এই পরিচয়েই। সঙ্গে আছে মায়ের সূত্রে গাঁথা দক্ষিণ এশীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিচয়, যে পরিচয়ে তিনি রোষের কারণ খোদ ভারতীয়দের কাছেই। বিরোধী রিপাবলিকান শিবিরের পর এই বিদ্বেষের বড় অংশের নেপথ্যে কট্টর হিন্দুরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থক ও তার সরকারের নেতৃত্বে, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধী যারা- তাদের দ্বন্দ্বে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছে মামদানির নির্বাচনী প্রচার ও বিজয়।

মামদানির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারণার বড় অংশজুড়েই ছিল তার ধর্মপরিচয়। প্রখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র পরিচালক মিরা নায়ার এবং প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক, উগান্ডান নাগরিক মাহমুদ মামদানির ছেলে, ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি পিতার মতোই নিজ ধর্মবিশ্বাসে মুসলিম। শুধু এ কারণেই মামদানিবিরোধীদের অনেকেই নতুন মেয়রকে আখ্যায়িত করছেন ‘জিহাদি’, ‘ইসলামপন্থি’, ‘হিন্দুবিরোধী’ কিংবা ‘ভারতবিরোধী’ বলে।

আরব আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক লিন্ডা সার্সৌর বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির সময় শুধু রিপাবলিকান শিবির থেকে বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের শিকার হননি মামদানি; ডেমোক্র্যাট শিবিরও সমানে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। অ্যান্ড্রু কুওমো আর তার অন্যান্য মিত্ররা মুসলিমবিদ্বেষী বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। বলতে ঘৃণা হচ্ছে, কিন্তু তারা মামদানির বাহ্যিক রূপ বদলে ছবিতে তাকে কট্টর মুসলিম হিসেবে চিত্রায়িত করেছে।’

আরও পড়ুন:

নিউ ইয়র্কে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের মধ্যে এসব বিশেষণ মামদানির প্রচারে প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কাকে ছাপিয়ে গেছে মামদানির জয়। সাবেক মেয়র এরিক অ্যাডামস, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের টেক্কা দিতে ভোটের মাঠে নামা মামদানি গাজা ও ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে সোচ্চার। অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের গুঁড়িয়ে দেয়া বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের বিরোধিতায় ২০২০ সালে টাইমস স্কয়ারে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

মোদি নিউ ইয়র্কে গেলে তার সঙ্গে দেখা করবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মামদানি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আখ্যায়িত করেছিলেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে। কারণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন ২০০২ সালে মোদি ভারতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, হাজারও মানুষের মৃত্যু- যাদের বড় অংশই মুসলিম এবং সহিংসতার সময় মোদির নীরবতার কথা, যে ঘটনার পর ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতায় গুরুতর আঘাত হানার অভিযোগে মোদির ভিসা বাতিল করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠোঁটকাটা ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানির স্পষ্টবাদিতায় ক্ষুব্ধ গোঁড়া হিন্দুরা। তার বিরুদ্ধে যারা সরব, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ভারতে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার ও তার দল বিজেপি’র সদস্য। ভোটের দিন পর্যন্ত উগান্ডায় জন্ম বলে মামদানির মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বের করে দেয়াসহ নানা বিদ্বেষপূর্ণ দাবি তোলে এই কট্টরপন্থিরা।

মেয়র নির্বাচনে এক ধাপ এগোনোর পরই ভারতে বিজেপিপন্থি সংবাদমাধ্যম আজ তাকের এক অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়েছিল, ভারতবিরোধী প্রচারের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেয়েছেন মামদানি। নিউ ইয়র্কে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে বলেও সতর্ক করে চ্যানেলটি। যদিও পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাব বলছে, নিউ ইয়র্কে সাত লাখের বেশি ভারতীয় প্রবাসী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বাস, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেশি।

লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ, জ্যাকসন হাইটস আর পার্কচেস্টারের মতো এশীয় জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি সমর্থন কুড়িয়েছেন মামদানি।

এসএস