২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেন এক কানাডীয় ব্যক্তি। আট বছরের মেয়াদকে কমিয়ে পাঁচ বছরের চুক্তি করেন তিনি। সেসময় ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করেন, কানাডার সামনের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়তেই কী ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়াদ কমিয়েছেন? প্রতি উত্তরে মুচকি হাসিতে বিষয়টি এড়িয়ে যান ব্যক্তিটি। ছয় বছর বাদে তারই হাতে যাচ্ছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব।
ব্যাংকারদের ব্যাংকার এমনকি সুপারস্টার ব্যাংকারের তকমা জুটেছে মার্ক কার্নির কপালে। তাই ভঙ্গুর অর্থনীতি, শ্রমবাজারে চাপ ও আবাসন সংকটসহ নানামুখী সংকটে জর্জরিত কানাডিয়ানদের বাজির ঘোড়া এই ৫৯ বছর বয়সী নেতা। প্রধানমন্ত্রীত্ব নিশ্চিতের দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন কার্নি। ঘোষণা দেন, শুল্কযুদ্ধে মার্কিনদের হারিয়ে জয়ী হবেন কানাডিয়ানরা। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ওয়াশিংটনের পণ্য আমদানিতে পারস্পরিক আমদানি শুল্কারোপ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ব্লুমবার্গ নিউজের অটোয়া ব্যুরো চিফ লরা কেন বলেন, 'সম্পর্ক খুবই দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই মার্ক কার্নি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আর বিশ্বাস করা যাবে না। তাই তিনি নতুন ব্যবসায়িক অংশীদার খোঁজার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করায় জোর দিয়েছেন। এছাড়াও দেশের ভেতরকার প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা বলেছেন। এটি কানাডার নীতির বড় পরিবর্তন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি মিত্র থেকে শত্রুর তকমা দিয়েছেন তিনি।'
কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে কানাডায় বাড়ছে অভিবাসীদের চাপ। এক্ষেত্রেও সরব নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রেখে অভিবাসন নীতি সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মার্ক কার্নি। এক্ষেত্রে ২০২৭ সাল নাগাদ অস্থায়ী নাগরিকত্ব ৬.২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে ট্রুডো সরকারের নীতিকে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। শুধু স্বাস্থ্যসেবা ও ক্লিন এনার্জি খাতে বিদেশি কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। অন্যদিকে কানাডায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবেন নির্দিষ্ট সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।
কানাডায় এমন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যিনি এমপি নন। এমনকি মন্ত্রিসভার দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতাও নেই। তবে ভারি অভিজ্ঞতা সনদধারী মার্ক কার্নির প্রতি কানাডিয়ানদের আস্থা সীমাহীন। রিডার্স ডায়জেস্টের জরিপ অনুযায়ী ২০১১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে আস্থাভাজন কানাডিয়ান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। সেই আস্থার প্রতিদান দেয়ার পালা চলে এসেছে এবার।