জেলেনস্কিকে কড়া বার্তা ট্রাম্পের

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

ট্রাম্পের সমালোচনা না করে, ৫০ হাজার কোটি ডলারের খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে কড়া বার্তা দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এর পরপরই সুর নরম করে জেলেনস্কি বলেন, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সইয়ে রাজি তিনি। এদিকে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে পুতিনের প্রতি দুর্বল না হতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান ফরাসি প্রেসিডেন্টের।

যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে সৌদি আরবে হওয়া ওয়াশিংটন ও মস্কোর বৈঠকে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় প্রতিনিধি না রাখা, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলা এবং ইউক্রেনের প্রায় ৫০ শতাংশ খনিজ সম্পদের মালিক হতে চাওয়া। গেল কয়েকদিন ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও মন্তব্যে মিত্র কিয়েভ ও ইউরোপের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

এরমধ্যে খনিজ সম্পদ দিতে না চাওয়া এবং ট্রাম্প ভুল তথ্যের জগতে বাস করছেন জেলেনস্কির এমন মন্তব্যে কিয়েভের জন্য কড়া বার্তা দিলো হোয়াইট হাউজ। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে এর বিনিময়ে জন্য হলেও প্রস্তাবিত ৫০ হাজার কোটি ডলারের খনিজ চুক্তিতে ইউক্রেনকে আসতেই হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টতই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ওপর খুবই হতাশ। তিনি আলোচনার টেবিলে আসননি এবং আমাদের দেয়া সুযোগ নিতে ইচ্ছুক নন। আমি মনে করি তিনি শেষ পর্যন্ত তিনি সমঝেতায় রাজি হবেন এবং সেটি খুব দ্রুত।'

যুদ্ধ বন্ধের ওপর গুরুত্ব দেয়ায় এখন ইউক্রেনের জন্য আরেক দফা সহায়তা বিল পাসে কোন আগ্রহ নেই বলে জানান মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, 'যুদ্ধে রাশিয়া প্রায় সাত লাখ সেনা হারিয়েছে, সম্ভবত আরও বেশি। ইউক্রেনীয়রাও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই যে করেই হোক এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সঠিকটাই বলেছেন। এটি শেষ করার সময় এসেছে। তাঁর হাত ধরেই এটি সম্ভব।'

এমন উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ইউক্রেন সফর করেন ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত কিথ কেলগ। এরপর সুর নরম করে জেলেনস্কি জানান, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তিতে রাজি তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাওয়ার বিষয়টিও ‌পুনর্ব্যক্ত করেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তিনি বলেন, 'সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের শক্তিশালী চুক্তি দরকার। অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থে আমাদের সবসময় একসাথে চলতে হবে। তবে অবশ্যই চুক্তির বিশদ বিবরণ ভালোভাবে তৈরি করা হবে। দূত কিথ কেলগের সাথে বৈঠকে আমরা যুদ্ধবিরতি, রাশিয়ায় থাকা বন্দিদের মুক্তি এবং ইউক্রেন যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টির গুরুত্বারোপ করেছি। একইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি। কারণ ইউক্রেন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি পুরো বিশ্বেরই আসলে শান্তি দরকার।'

এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে ২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে পুতিনের প্রতি দুর্বল না হতে ট্রাম্পের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হবে বলে জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ করেন, পুতিনের প্রতি দুর্বলতা দেখালে চীন ও ইরানকে মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, 'আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মূলত বলতে চাই, তিনি যেনো রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামনে দুর্বল না হন। কারণ এই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি শুধু আপনার স্বার্থে নয়। তাছাড়া তিনি যদি পুতিনের সামনে দুর্বল হন, তাহলে চীন ও ইরানের সামনে শক্ত অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে চুক্তি করতে চান, তা কখনোই কাম্য নয়।'

এদিকে লড়াইয়ের ময়দানে বৃহস্পতিবার একটি ইউক্রেনীয় মিগ-টুয়েন্টি নাইন যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার পাশাপাশি শতাধিক ড্রোন জব্দের দাবি করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে খারকিভ, লাইমান এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের মতো এলাকাগুলোয় রুশ সেনাদের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়ার দাবি করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

এসএস