দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধ বন্ধে নিজের সক্ষমতারও প্রমাণ রেখেছেন তিনি। তারই উদ্যোগে প্রায় ৩ বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আলোচনার টেবিলে।
এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সময় পর আবারও বরফ গলতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে। পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা বাড়লেও দূরত্ব বেড়েছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে। কিয়েভের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবার জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলে আক্রমণ করে বসলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষেও নির্বাচন না দেয়ায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, দ্রুত শান্তি আলোচনায় না আসলে ইউক্রেনও হাতছাড়া হবে জেলেনস্কির। একদিনের ব্যবধানে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরাগভাজন হওয়ার অনেকেই অবাক। যা ইউক্রেনসহ ইউরোপের ভবিষ্যতকে শঙ্কিত করে তুলেছে।
তবে এখনও ইউক্রেনের জন্য নিজের দুয়ার খোলা রেখেছেন ট্রাম্প। ফ্লোরিডায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জেলেনস্কি চাইলে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন কখনও চেষ্টা করেননি। ইউরোপ শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং জেলেনস্কিও সম্ভবত চান আগ্রাসী অভিযান চালিয়ে যেতে। সমস্যা কী এবং তা সমাধানে তিনি ব্যর্থ। আলোচনায় আমন্ত্রণ না পেয়ে তিনি খুব দুঃখ পেয়েছেন। তবে তিনি চাইলে সৌদি আরবের আলোচনায় আসতে পারতেন। গেল ৩ বছরে যুদ্ধ বন্ধে জেলেনস্কি কোনো আলোচনা, বৈঠক বা ফোনকলও করেননি। এটি মেনে নেয়ার মতো বিষয় না।'
এদিকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সাহস ও ঐক্যের সঙ্গে ইউক্রেনবাসীদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনের সফলতা চায় বলে দাবি করেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'আমাদের নিজের পায়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। ইউক্রেনের সব নাগরিককে সাহস ও ঐক্যের ওপর ভর করে চলতে হবে। আমাদের অংশীদারদের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ইউরোপীয় সংহতি প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য ঠিক ততটাই প্রয়োজন যতটা আমাদের প্রয়োজন। সাফল্য আমাদের একত্রিত করতে পারবে।'
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প-জেলেনস্কির ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে ফায়দা লুটতে পারে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ বাড়লে তা গোটা ইউরোপের জন্যই দুঃখ বয়ে আনবে বলে মত তাদের।
আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট বলেন, 'কয়েক সপ্তাহ আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনকে নেকড়ের মুখে ছুঁড়ে ফেলবেন না। এর অর্থ এই নয় যে তিনি তা কখনোই করবেন না। এখন তিনি ইউক্রেনের ওপর ক্ষুব্ধ, তার মন পরিবর্তন হয়েছে। তার চারপাশের লোকজনও তাকে স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে না। তাদের নীতিতে পরিবর্তন আসবে না খুব একটা।'
এমন অবস্থায় ইউরোপকে ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিস। তিনি বলেন, ইউরোপকে মার্কিন নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এদিকে, জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে রাশিয়াই প্রথম যুদ্ধ শুরু করেছে।