অস্ত্র সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেনের কাছে ৫০ হাজার কোটি ডলারের দাবি ট্রাম্পের

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

গেলো তিন বছরের পাশাপাশি ভবিষ্যতের অস্ত্র সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেনের কাছে ৫০ হাজার কোটি ডলারের রেয়ার আর্থ মিনারেল দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও অর্থ সহায়তা নিয়ে বিপরীতমুখী মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। সামরিক সহায়তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুর কাছে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইসরাইলের কপাল খুলে গেলেও কপাল পুড়েছে ইউক্রেনের। সামরিক সহায়তা নিয়ে দেখা দিচ্ছে একের পর এক অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনকে বিরল খনিজ পদার্থের পরিবর্তে সামরিক সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির কাছে উল্টো মার্কিন সহায়তার দ্বিগুণের বেশি অর্থ দাবি করেছেন তিনি। ফক্স নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে কিছু না পেয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা করে যাওয়া বোকামি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, খুব দ্রুত ইউক্রেনের সঙ্গে এই বিষয়ে চুক্তিতে আসতে হবে।

ট্রাম্প দাবি করেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে হবে। অস্ত্র সহায়তা পেতে ইউক্রেনকে দিতে হবে ৫০ হাজার কোটি ডলারের রেয়ার আর্থ মিনারেল। যেই অর্থ ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য দেয়া হয়েছে, তা তুলে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভলোদিমির জেলেনস্কি লিথিয়াম, টাইটেনিয়ামসহ রেয়ার আর্থ মিনারেল যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়ার প্রস্তাবে গেলো সপ্তাহে সম্মতি জানালেও বলেন, বিনিয়োগের আগে বিরল খনিজ রয়েছে এমন অঞ্চলগুলো থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সরাতে প্রয়োজন পশ্চিমা সহায়তা।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা আরও দূরদর্শী। ব্যবসার খাতিরে এই প্রশাসন চাইছে, ইউক্রেনের জন্য ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি করে সমরাস্ত্র কিনুক। আর এজন্য ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত করতেই বলা হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে। আর এটি হয়ে থাকলে ধীরে ধীরে পূর্বাঞ্চল ইউক্রেনের হাতছাড়া হয়ে যাবে। ইউরোপের দেশগুলো জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনেছে। যা অব্যাহত রাখার চিন্তা করছে বর্তমান সরকার। ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক দূত কেইথ কেলগ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নিজেদের অস্ত্র বিক্রি করতে চায়, কারণ এতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। দ্রুতই তার ইউক্রেন সফরের কথা রয়েছে।

তবে পরিকল্পনা এখনও পরিস্কার নয়, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউরোপে অস্ত্র বিক্রি করবে, নাকি মজুত থেকে সরাসরি বিক্রি করবে। যদিও ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্র কিনবে ইউরোপ। ২০২২ ধেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সহায়তা অনুমোদন করেছে মার্কিন কংগ্রেস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইউক্রেনের পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তুলনায় ২০ হাজার কোটি ডলার বেশি ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, মাত্র ৭ হাজার ৫শ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পেয়েছে কিয়েভ। ২০ হাজার কোটি ডলার কোথায় উধাও হয়েছে, জানা নেই তার। তবে ট্রাম্প - পুতিনের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে আশাবাদী তিনি।

যদিও কিয়েভের এতো প্রস্তুতির মধ্যে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কঠোর অবস্থানে চলে গেছে মস্কো। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চাইছেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই যুদ্ধের ইতি টানতে। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শর্ত, তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ তখনই বন্ধ হবে, যখন ন্যাটোতে যোগ দেয়ার স্বপ্ন ইউক্রেন বিসর্জন দেবে, পাশাপাশি রাশিয়ার অধিকৃত চার অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মস্কোকে দিয়ে দিতে হবে।

এমন সংকটময় মুহূর্তে ইউক্রেনের দুর্নীতি নিয়ে উঠে আসছে নানা খবর। অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। মার্কিন এক সাংবাদিকের দাবি, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা আন্তর্জাতিক কালো বাজারে বিক্রি করছে কিয়েভ। এতে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু মেক্সিকোর মাদক পাচারকারীরা। মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কলোনেল ড্যানিয়েল ডেভিসের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র ইউক্রেনকে দিয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি কালোবাজারে গেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই বিক্রি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের কাছে। সীমান্তে মাদক চোরাকারবারীরা এই অস্ত্র অনলাইনে কিনতে পারে বলেও অভিযোগ করেন সেই সাংবাদিক। এই অভিযোগ ওঠার পর ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এসএস